হাওড়া: রাজ্য থেকে মুছে যাবে আরও এক কারখানা! অধিগ্রহণের জাঁতাকলে পড়ে বুলডোজারে গুঁড়িয়ে যাবে প্যারাসিটামল তৈরির কারখানা! রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ভাঙতে চায় ওই কারখানার একাংশ। হাওড়ার সাঁতরাগাছিতে থাকা ওই কারখানার মালিকরা বলছেন, ওই অংশ ভেঙে দিলে কারখানার মেরুদণ্ডটাই ভেঙে যাবে। এক বাঙালি ব্যবসায়ীর হাত ধরে দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ তৈরি হচ্ছে ‘ডায়মন্ড ড্রাগ’ নামে ওই কারখানায়।
সংস্থাটি তৈরি হয় ১৯৫৪ সালে। ১৯৭২ সাল থেকে সাঁতরাগাছির ৯৪ নম্বর রোড আশুতোষ ঘোষ রোডে রয়েছে ওই কারখানা। এই কারখানায় উৎপাদন করা হয় একাধিক ওষুধ। সেগুলি পৌঁছে দেওয়া হয় সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তৈরি হয়, প্যারাসিটামল, আইবুপ্রুফেন, অ্যামোক্সিসিলিন, ক্লক্সাসিলিন ক্যাপসুলস, লিনেজোলিড (অ্যান্টিবায়োটিক), ওফ্লক্সাসিন (অ্যান্টিবায়োটিক)-এর মতো ওষুধ। এছাড়াও আরও ২০টি প্রোডাক্ট রয়েছে।
উপরোক্ত ওষুধগুলি সরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সরবরাহ করা হয়। দরপত্র পাওয়ার পর এই সংস্থাই হল সরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের একমাত্র ওষুধের সাপ্লায়ার। ডায়মন্ড ড্রাগ নামে এই সংস্থা থেকে সরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রায় ৪০ কোটি প্যারাসিটামল সরবরাহ করা হয়। এছাড়া পাঠানো হয় ১৫ কোটি আইবুপ্রুফেন, এক কোটি অ্যামোক্সি-ক্লক্সা, চার কোটি ওফ্লক্সাসিন, ৫০ লক্ষ লিনেজোলিড।
১৫০ জন কর্মী কাজ করেন ওই কারখানায়। জানা গিয়েছে, ২০২২ সালে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজে অধিগ্রহণের জন্য নোটিফিকেশন জারি করে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। বিকল্প জায়গার খোঁজে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয় ডায়মন্ড ড্রাগ কোম্পানি।
অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে বেআইনিভাবে কারখানা ভাঙার কথা বলা হচ্ছে। ২০১৩ সালের ১০৫ (৩) ধারায় বলা আছে, সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ করলে ক্ষতিগ্রস্তদের বিকল্প জায়গা দিতে হবে। এই আইনে কেন্দ্রের তরফে ২০১৭ সালে নির্দেশিকাও জারি হয়েছে। সেটা শোনা হচ্ছে না বলে দাবি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। যদিও ভিন্নমতও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাওড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তার পর্যবেক্ষণ, গত নভেম্বর থেকে ডায়মন্ড ড্রাগস কোম্পানির সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। ওঁরা বিকল্প জমি না নিয়ে সরতে নারাজ। এই প্রশ্নে অনড় থাকার কারণেই জটিলতা তৈরি হয়েছে। ওই এলাকায় আরও একটি সংস্থা রয়েছে। তারা ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন। তাদের কেএমডিএ এলাকায় বিকল্প জমি দেওয়ার বিষয়টিও আমরা দেখছি। ডায়মন্ড ড্রাগস বিকল্প জমি নিয়ে সেখানে কারখানা তৈরির পর সরার কথা বলছে। তাতে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে সম্প্রসারণের কাজ ব্যাহত হবে। সড়ক সম্প্রসারণের কাজ দিল্লি থেকে তদারকি হচ্ছে। সম্প্রসারণের কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ডায়মন্ড ড্রাগস সময় নষ্ট না করলে এই জটিলতা তৈরি হতো না।
জেলা প্রশাসনের এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রসঙ্গে সংস্থার ডিরেক্টর মিহির সরকার আবার বলেন, “কারখানার জন্য জায়গা দিন, আমাদের কোনও আপত্তি নেই।” তিনি আরও জানান হাইকোর্টে আগামী ২৩ জুলাই মামলার শুনানি আছে, তার আগে ১৯ জুলাই ভেঙে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমাদের সরানো হলে এই ১৫০ লোকের কী হবে। এতে সবার ক্ষতি হবে।” সংস্থার কর্মীরাও এই নিয়ে চিন্তায় রয়েছে। এই বিষয়ে TV9 বাংলার তরফে হাওড়ার জেলাশাসককে প্রশ্ন করা হলে, জেলাশাসক দীপাপ্রিয়া পি টিভি নাইন বাংলাকে জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই কলকাতায় থাকা ব্রিটানিয়ার কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এবার আরও এক কারখানা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।