হাওড়া: হাওড়ার শ্যামপুর ১ নম্বর ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম। সেই গ্রামে TV9 বাংলার প্রতিনিধি গিয়েছিলেন নিয়োগ দুর্নীতির তল খুঁজতে। পাড়ার গলিতে, চায়ের দোকানে, ক্ষেতে কাজ করার ফাঁকে গ্রামের নিতান্ত দেহাতি মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলা হয়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল দুর্নীতি বীজ বপন হয়েছে ধীরে ধীরে, যা আজ মহীরুহ। বেশ কয়েকটা মিডল ম্যানের নাম উঠে এসেছে। প্রভাস বেরা, প্রভাস সামন্ত, অম্লান থান্ডারি, পলাশ সামন্ত, জগবন্ধু মণ্ডলের নাম। গ্রামবাসীরাই বলছেন, ওঁদের মাথা হলেন অম্লান থান্ডার, যিনি আবার তৃণমূল জেলা পরিষদের সদস্য। অম্লান থান্ডারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অযোগ্য প্রার্থীদের কাছে টাকা তুলেছিলেন তিনিই। এলাকায় তাঁর বিশাল রাজনৈতিক দাপট বলে গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন। অম্লানের বাড়িতে গিয়েছিলেন TV9 বাংলার প্রতিনিধি। কিন্তু তাঁর বাড়ির দরজা বন্ধ। দেখা করেননি তিনি। TV9 বাংলার প্রতিনিধি দেখেই বাড়ির এক সদস্য দরজা বন্ধ করে দেন। রাস্তায় গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আড্ডা মারছিলেন এলাকারই দু-তিন জন গ্রামবাসী। তাঁদের একজন বললেন, “ও তো আরও বড় দালাল। আমাদের অম্লান। অম্লান থান্ডার।”
এলাকায় কান পাতলে বেশ কয়েকজন দালালের নাম উঠে আসছে। তাঁরা মূলত কুন্তল ঘোষ, প্রসন্ন রায় কিংবা তাপস মণ্ডলদের চেনে। মিডলম্যান প্রসন্ন রায় গ্রেফতার হওয়ার পরই গাদিয়াড়াতে ‘চলন্তিকা লজে’র কথা উঠে এসেছিল। এই চলন্তিকা লজ বকলমে চালাতেন এই অম্লান থান্ডার।
পথ চলতি এক বাইক আরোহীর কথায় উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি দাবি করলেন, “এখানে যত গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, প্রাইমারি সব চাকরি ওই একটাই লোক করে দিয়েছে।” আমাদের প্রতিনিধিকেই পাল্টা প্রশ্ন করেন, “আচ্ছা বলুন তো, ওঁর (অম্লানের) দাদা হাইস্কুলের মাস্টার, ওঁ কিছু করতে পারলেন না, আর ও সাধারণ কাজ করে দুটো ইট ভাটা, দুটো অন্তত ২৫ লাখের গাড়ি, রাস্তার ধারে চাকরি দিয়ে গাড়িও নিয়েছেন এমনও হয়েছে। চাকরি দিয়ে একদম গোবিন্দপুর স্কুলের সামনে জায়গা নিয়েছেন।” ওই লোকটি বললেন, “ওঁর বাড়ি দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। ওঁর সঙ্গে যে দুটো লোক থাকত, সঞ্জয় আর বিশ্বজিৎ তাঁরাও চাকরি পেয়েছিলেন। ওঁদেরও চাকরি চলে গিয়েছে।”
অম্লান থান্ডার তৃণমূল জেলা পরিষদের সদস্য। তাঁকে বেশ ভালভাবেই চেনেন বিধায়ক কালীপদ মণ্ডল। নামটা করতেই তিনি বলেন, “আমি চিনি অম্লানকে। জেলা পরিষদের মেম্বার তো। না চেনার কী আছে, সকলেই চেনেন, সম্পদ থানার মানুষ। তবে ও ওর এলাকা থেকে নয়, অন্য এলাকা থেকে নির্বাচিত।” এলাকায় যে তাঁর রাজনৈতিক দাপটও মারাত্মক তা একবাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন গ্রামবাসীরাও। সব জেনেও পুলিশের ভয়ে চুপ তাঁরা।
এই অম্লান ভান্ডারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছিল TV9 বাংলা। প্রথম দুবার ফোন কেটে দেন। তারপর ফোন ধরে বলেন, “TV9 রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে খবর করছে করুক। আমি দেখাও করতে চাই না, কিছু বলতেও চাই না। বাজে কথা শোনার মতো মানসিকতা আমার নেই।” এরপরই ফোন কেটে দিয়েছেন অম্লান। আদৌ গ্রামবাসীরা কেনই তাঁর নাম নিচ্ছেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠছে, তা কি নিতান্তই মিথ্যা? বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরাও।