হাওড়া: হাওড়ার বিষমদ কাণ্ডের (Howrah Hooching Case) জেরে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন। যা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা রাজ্যেই। এদিকে বিষমদে মৃত্যুর প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই পথে নেমেছে বিজেপি (BJP)। এদিকে বিষমদ কাণ্ডে মূল মাথা হিসাবে উঠে এসেছে প্রতাপ কর্মকারের নাম। এই প্রতাপই গজানন বস্তিতে প্রায় ৩০ বছর ধরে বেআইনি মদের ব্যাবসা চালাতেন বলে অভিযোগ। মালিপাঁচঘড়া থানা থেকে মাত্র ২০০মিটার দূরত্বেই বিক্রি হত এই মদ। কিন্ত, তারপরেও পুলিশ (Police) কেন তাঁর খোঁজ পেল না? নাকি পিছনে রয়েছে অন্য কোনও আঁতাত? সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
পারিবারিকভাবেই চলত বেআইনি মদের ব্যবসা
ইতিমধ্যেই প্রতাপকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্থানীয়দের দাবি, পারিবারিক ভাবে এই মদের ব্যবসা চালাচ্ছিল প্রতাপের পরিবার। তাঁর আগে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর বাবা এ ব্যবসা চালাতেন। বাবার পর ব্যবসার দায়িত্ব প্রতাপ নিজের হাতে নেওয়ার পর আরও ফুলেফেঁপে উঠে এই বেআইনি মদের ব্যবসা। সূত্রের খবর, প্রথমে বাংলা মদ কিনে তা দিয়েই ফের ব্যবসা করত প্রতাপ। সরকার স্বীকৃত দেশি মদের দোকান থেকে বাংলা মদ কিনে নিয়ে এসে তার সঙ্গে জল মিশিয়ে মদের পরিমাণ বাড়িয়ে নিত প্রতাপ। অভিযোগ, সঙ্গে মেশানো হত স্পিরিট। এদিকে ঘটনাস্থল থেকে এই স্পিরিটের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার পরেই চোখ কপালে ওঠে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের। ঘটনাস্থলে পাওয়া গিয়েছে বাংলা মদের বোতল,স্পিরিটের বোতল ও পানচিং মেশিন। যা ল্যাবে পরীক্ষার পর দেখা যায় দেশি মদে যে স্পিরিট মেশানো হত তা আদপে কাঠের দোকানে পালিশের কাজে ব্যবহৃত হত। রেনসিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন মদে স্পিরিট অতিরিক্ত বেশি থাকার কারণেই ঘটে বিপত্তি। তবে মৃতদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে এলেই পরিষ্কার হবে বিষক্রিয়ার আসল কারণ।
পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের মদতেই বুক জিতেই বেআইনি মদের ব্যবসা?
এদিকে বিজেপি সহ স্থানীয়দের একটা বড় অংশের অভিযোগ, পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের একটা বড় অংশের দীর্ঘদিনের মদতেই বেআইনি এই মদের ব্যবসা রমরমিয়ে চালাতে পারতেন প্রতাপ। তবে কোনও মাদকদ্রব্যের প্রতিই আসক্তি ছিল না প্রতাপের। মদ তো নয়ই, এমনকি সিগারেট, গুটখা কোনও নেশাই তিনি করতেন না বলে দাবি স্থানীয়দের। মালিপাঁচঘরার কৈবর্ত্যপাড়া লেনে থাকতেন প্রতাপ। তবে এলাকার লোকজনের সঙ্গে বিশেষ সদ্ভাব ছিল প্রতাপের। তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গেও বিশেষ মেলামেশা ছিল না প্রতিবেশীদের। রোজ সকাল ১০টা নাগাদ ব্যবসার কাজে বাড়ি ছাড়তেন প্রতাপ। ফিরতেন মধ্যরাতে। দিনভর চালাতেন বিষ মদের কারবার।
কে ছিল প্রতাপের পার্টনার?
তবে পুলিশি জেরায় প্রতাপ জানিয়েছেন, তিনি একা নন বিষমদের কারবারে তাঁর মূল পার্টনার ছিলেন প্রকাশ মিত্র নামে একজনের কাঁধে। তাঁর দাবি তিনিই এ ধরনের কাজ করেছেন। সরকারি বাংলা মদ ও বিয়ার ব্ল্যাকে বিক্রি করতে বললেও প্রকাশ যে এরকম কাজ করতেন তা তিনি জানতেন না বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন অভিযুক্ত প্রতাপ কর্মকার। মদ খেয়ে মৃত্যু হয়েছে প্রকাশের। এই ঘটনার পর মৃতদের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।এরপর ভিসেরা পরীক্ষা করার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে ফরেনসিক ল্যাবে।সেই রিপোর্ট এলে জানা যাবে কিভাবে বিষক্রিয়া হয়েছে।
বিজেপির মিছিলকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার
এদিকে হাওড়ার বিষমদ কাণ্ডে রাজ্য সরকারের উপর ক্রমাগত চাপ বাড়াতে শুরু করেছে বিজেপি। শুক্রবার হাওড়ার পঞ্চানন তলায় বিজেপির প্রতিবাদ মিছিলকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার কাণ্ডও বেধে যায়। পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয় প্রতিবাদকারীদের। তবে শুক্রবারের প্রতিবাদ মিছিলের ডাক আগেই দিয়েছিল বিজেপি। ডেপুটেশন জমা দেওয়ার কথা ছিল হাওড়া সিটি পুলিশের অফিসে। কিন্তু, হাওড়া বিজেপি অফিস থেকে মিছিল বের হলেই পথ আটকায় পুলিশ।