হাওড়া: দাসনগরের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যু ঘিরে ক্রমশ দানা বাঁধছে রহস্য। গল্প করতে গিয়ে বন্ধুর ফ্ল্যাট থেকে কীভাবে নীচে পড়ে গেল গণেশ? তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। শুধু তাই নয়, এক সহপাঠীর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল বলেও জানিয়েছে গণেশের পরিবার। তাঁদের দাবি, এই মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। ইতিমধ্যেই দাসনগরের ছাত্র গণেশ ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা শুরু করেছে দাসনগর থানার পুলিশ। সংবাদমাধ্যমের কাছে আজ গণেশের মা ও দিদি দাবি করেছেন, এটা পরিকল্পিত খুনের ঘটনা। ত্রিকোণ প্রেমের কারণেও এমনটা ঘটে থাকতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন। গণেশের এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ও বন্ধুর দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলছেন তাঁরা।
গণেশের মা শুক্লা ঘোষ জানান গত বুধবার স্কুল থেকে ফেরার পর ভীষণ রকম মনমরা দেখাচ্ছিল তাঁর ছেলেকে। বিকেলের দিকে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফোন করে তাঁকে রেস্তোরাঁয় যেতে বলে। এরপরই সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু অনেক রাত হয়ে গেলেও ছেলে বাড়ি না ফেরায় ফোন করলে সে ফোন ধরেনি। যে বন্ধুর ফোনের পর সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল তাকে ফোন করা হলেও সে ফোন ধরেনি। পরে ওই বন্ধুর ফোন থেকে একজন জানান গণেশ অসুস্থ।
শুক্লাদেবী জানিয়েছেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে তাঁর বন্ধুর মতো সম্পর্ক ছিল। সে সবকিছু খুলে বলত। রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে সে কেন তার ফ্ল্যাটে গেল এবং ঘটনার অনেক পরে কেন তাঁদের জানানো হল, তা নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, রাত পৌনে আটটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। ৬ তলা ফ্ল্যাট থেকে নীচে পড়ে মৃত্যু হয় কিশোরের। পরিবারের দাবি, সেই সময়ও তার মোবাইলটা ঠিক ছিল। রাত প্রায় ১-টা পর্যন্ত মোবাইল ঠিক থাকলেও পরে পুলিশ জানায় মোবাইলটি ভেঙে গিয়েছে। যদি ৬ তলা বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে গণেশের মৃত্যু হয়, সে ক্ষেত্রে তার পকেটে থাকা মোবাইল কীভাবে রাত ১০ টা পর্যন্ত ঠিক থাকল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আরও জানা গিয়েছে, গণেশের সঙ্গে তার স্কুলের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর প্রায় এক বছর ধরে ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। পরে তাঁরা জানতে পারেন মেয়েটি ভাল নয়। গণেশের দিদি শ্রাবণী ঘোষ জানান, ওই ছাত্রীর সঙ্গে অন্য একটি ছেলের সম্পর্ক ছিল। ভাই তা জানতে পেরে সরে আসার চেষ্টা করছিল, কিন্তু মেয়েটি ভাইকে বারবার বিরক্ত করত। যা নিয়েই নাকি বেশ কিছুদিন ধরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল গণেশ। পরিবারের লোকজন মনে করছেন, ওই বন্ধু ও বান্ধবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি গণেশের মোবাইলে চ্যাট দেখলেই সব তথ্য সামনে আসবে।
শুক্রবারই ঘটনাস্থলে যান ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। রাজ্য ফরেন্সিক বিভাগের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর সিদ্ধার্থ সরকার বলেন, ‘ফ্ল্যাটের ছাদ থেকে তিন বার ডামি পুতুল ফেলে দেখা হয়েছে, ওই ছাত্রকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে নাকি সে নিজে ঝাঁপ মেরেছে।’ তবে সেটা সঠিকভাবে জানতে আরও কিছু পরীক্ষা করা হবে। এদিকে গণেশের বান্ধবীর পরিবার এ বিষয়ে মুখ খুলতে অস্বীকার করেছে।