হাওড়া : তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন সুরজিৎ সাহা। হাওড়া সদরের এই নেতাকে বহিষ্কার করেছিল বিজেপি। একটি ভিডিয়োতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে। এরপরই তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেবেন তিনি। সব ঠিক থাকলে আগামিকাল হাওড়ার শরৎ সদনে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি অনুষ্ঠানে তিনি ঘাসফুলের পতাকা হাতে তুলে নেবেন।
রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় জানিয়েছেন, তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য একটি চিঠি লিখেছেন সুরজিৎ সাহা। দলনেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের কাছে অনুমতি দিয়েছেন বলে জানান অরূপ রায়। তিনি উল্লেখ করেছেন, আগামিকাল, বৃহস্পতিবার তৃণমূলের এসসি এসটি সেলের একটি অনুষ্ঠানে সুরজিৎ তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা হাতে তুলে নেবেন। সুরজিতের সঙ্গে তাঁর কিছু অনুগামীও যোগ দেবেন দলে।
একসময় তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথা বলতেন সুরজিৎ। তবুও কেন তাঁকে দলে জায়গা দেওয়া হচ্ছে? অরূপ রায় বলেন, ‘অনেকেই অনেক কথা বলেছিল। অনেককেই আমরা দলে নিয়েছি। আমাদের দলনেত্রীর বিরুদ্ধেও কথা বলেছিলেন, তাঁকেও আমরা দলে নিয়েছি। যে আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে, তার মনে হয়েছে যে সে ভুল করেছে। সে বুঝতে পেরেছে বাংলার উন্নয়নে এই দলটাই সঠিক। মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নে সামিল হতে তাই যোগ দিতে চেয়েছে।’
কিছুদিন আগে হাওড়া পুরসভার বাম পুরবোর্ডের প্রাক্তন মেয়র এবং সিপিএম নেত্রী মমতা জয়সওয়াল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন। অরূপবাবু বলেন, বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা দলে যোগদান করায় দল আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
সুরজিৎবাবু নিজেও জানিয়েছেন যে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে তাঁর অনুগামীদের নিয়ে যোগদান করতে যাচ্ছেন। তিনি মনে করেন, বিজেপিতে অন্য দল থেকে আসা নেতাদের গুরুত্বই বেশি। ২৮ বছরের পুরনো কর্মীদের কোনও জায়গা নেই। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি এখন শুভেন্দু অধিকারী অ্যান্ড কোম্পানির পরিচালনায় পরিচালিত বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাঁর দাবি, আগামিদিনে হাওড়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের ধারাকে আরও ত্বরান্বিত করতে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে চলেছেন তাঁর অনুগামীদের নিয়ে।
বিজেপির হাওড়া জেলার আহ্বায়ক মনিমোহন ভট্টাচার্য সরাসরি সুরজিতের কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে জানালেন, তিনি এখন দলের কাছে অতীত। তাঁর বিজেপিতে না থাকায় হাওড়া জেলা বিজেপির কোনও ক্ষতি হবে না বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ যাদের হাতে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব রয়েছে তারা সঠিক পথেই দলকে পরিচালনা করছে বলেই মনে করেন মনিমোহন।
বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বলার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। পাশাপাশি, নারদ-কাণ্ডের কথা মনে করিয়ে শুভেন্দুকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি তিনি। আর সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সুরজিৎ সাহাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল গত নভেম্বর মাসে। বিজেপিতে তৃণমূলিকরণ হচ্ছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি।
নভেম্বের একটি বৈঠকে বসেছিল রাজ্য বিজেপি। হাওড়া ও কলকাতা পুরভোটের জন্য কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয় সেই বৈঠকে। ওই বৈঠক থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত।
সূত্রের খবর, এই দিনের বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী নাকি হাওড়ার কয়েকজন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে তৃণমূলের সঙ্গে গোপন আঁতাতের অভিযোগ তুলেছিলেন। এরপরের দিনই প্রকাশ্যে আসে হাওড়া সদরের বিজেপি সভাপতি সুরজিৎ সাহার সেই বিস্ফোরক ভিডিয়ো। যেখানে তিনি সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীর নাম করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তৃণমূলের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ শুভেন্দুকে প্রমাণ করতে হবে জনসমক্ষে, নাহলে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
নারদ-কাণ্ড নিয়েও শুভেন্দুকে বিঁধতে ছাড়েননি সুরজিৎ সাহা। পরোক্ষে চোর বলে আক্রমণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রমাণ করতে হবে আপনি কত বড় সৎ। আপনাকে তো নারদে হাতে করে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল। ভারতীয় জনতা পার্টির কাউকে টাকা নিতে দেখা যায়নি।’ এরপরই তড়িঘড়ি বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায় বিজেপিকে।