হাওড়া: কারশেডে সবেমাত্র ট্রেন ঢুকেছে। কিছু পরেই রেলকর্মীরা আসেন সাফসুতরো করার জন্য। কামরাগুলি পরিষ্কার করার সময় হঠাৎই একটিতে সিটের নীচের দৃশ্য দেখে চমকে ওঠেন তাঁরা। কাপড়ে জড়ানো একটা ছোট্ট দেহ। উঁকি মারছে পুতুলের মতো একটা মুখ। যে সাফাইকর্মী সেখানে ছিলেন, চিৎকার করে বাকিদের ডাকেন। সকলে এসে সিটের নীচ থেকে উদ্ধার করেন একটি ছোট শিশুকে। সে একটি সদ্যোজাত শিশুকন্যা। শুক্রবার দুপুরে বামনগাছি কারশেডে বর্ধমান লোকাল ঢুকতেই এই দৃশ্য নজরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় আরপিএফ এবং রেলের চাইল্ড লাইনে। শিশুকন্যাটিকে উদ্ধার করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই ভর্তি রয়েছে সে। কে বা কারা এই সদ্যোজাত শিশুটিকে ফেলে রেখে গিয়েছে তার খোঁজ শুরু হয়েছে। কন্যাসন্তান হওয়ায় মা-বাবাই শিশুটিকে ফেলে যেতে পারে বলে অনুমান করছে রেল পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
হাওড়ার ডিআরএম মণীশ জৈন জানান, খবর পেয়েই তাঁদের তরফে দ্রুততার সঙ্গে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরপরই নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সেখানে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাকে। পরিবারের খোঁজ চলছে। রেলের চাইল্ড লাইনের কাউন্সিলর মৌলি চক্রবর্তী জানান, এমন ঘটনা প্রথম নয়। এর আগেও ঘটেছে। ট্রেনে সদ্যোজাত ফেলে চলে গিয়েছে পরিবার। সেক্ষেত্রে কন্যাসন্তানকেই ফেলে গিয়েছে পরিবার। এই ঘটনার পিছনে কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিন উদ্ধার হওয়া শিশুটিকে সুস্থ করে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিতে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যেরকম নির্দেশ দেওয়া হবে, শিশুটিকে সেভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হবে।
এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। গত বছরই শিয়ালদহ শান্তিপুর লোকালে এমন ঘটনা ঘটে। একটি দেড় মাসের শিশুকেকন্যাকে উদ্ধার করা হয়। এক ফেরিওয়ালা তাকে দেখতে পান। সিটের নীচ থেকে উদ্ধার করা হয় তাকে। শান্তিপুর পাবনা কলোনির এক মহিলা কলকাতায় পোশাক ফেরি করেন। তিনিই বাড়ি ফেরার পথে শিশুটিকে দেখতে পান। তবে শুক্রবার যে ঘটনাটি ঘটেছে, তাতে মনে করা হচ্ছে, সুযোগ বুঝে একেবারে প্রান্তিক স্টেশনে ট্রেন ঢোকার পরই কেউ শিশুটিকে সিটের নীচে রেখে দেন। তাতেই সকলের নজর এড়িয়ে যায়। কারশেডে কামরা পরিষ্কারের সময় তা নজরে আসে রেলের সাফাইকর্মীদের।