হাওড়া: যে সব পুরসভার মেয়াদ শেষ হয়েছে আগামী পঞ্চায়েত ভোটের সঙ্গেই সেখানেও ভোট করানোর পরিকল্পনা রাজ্যের। এরইমধ্যে হাওড়া (Howrah) ও বালি (Bali) পুরসভায় ভোট নিয়ে প্রস্তুতি শুরু প্রশাসনের। সোমবারই হয়েছে সর্বদল বৈঠক। হাওড়ার জেলাশাসক মুক্তা আর্যর উপস্থিতিতে হাওড়া পুর এলাকায় ভোটার তালিকা সংশোধন ও ডিলিমিটেশন বা ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাস নিয়ে এই সর্বদলীয় বৈঠক হয়। সূত্রের খবর, ভোট নিয়ে তৎপর প্রশাসন। যদিও কীভাবে এই ভোট হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বৈঠকে যোগ দেওয়া বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, একদিকে হাওড়া ও বালি পুরসভার আলাদা হওয়ার বিষয়টি জেলা প্রশাসন তাদের কাছে পরিষ্কার করেনি। অপরদিকে হাওড়া ও বালি পুরসভায় ডিলিমিটেশন বা ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসও আইন মেনে হয়নি। শাসকদল তৃণমূল অবশ্য বৈঠকের পর জানিয়েছে, প্রশাসন ডিলিমিটেশনের কাজ সঠিকভাবেই করেছে। ফলে হাওড়া ও বালি পুরসভায় ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়ে খুব শীঘ্রই ভোট করা হোক।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, আগেই হাওড়া ও বালি পুরসভায় ডিলিমিটেশন নিয়ে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছিল জেলা প্রশাসন। সেই তালিকা সব রাজনৈতিক দলের কাছেই পাঠানো হয়। ডিলিমিটেশন নিয়ে বেশ কিছু আপত্তির কথা জেলা প্রশাসনকে অভিযোগ করে জানায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। সেখানে কিছু সংশোধন করেই এদিন জেলা প্রশাসনের তরফে সে ব্যাপারে আলোচনার জন্য সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়। জেলাশাসকের দফতরে এই বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে সর্বদল বৈঠকে অংশ নেওয়া বিজেপি নেতা সুপ্রীতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ডিলিমিটেশন পদ্ধতিরই বিরোধিতা করছি। বালি পুরসভাকে আলাদা করে কীভাবে বালির ৫১ থেকে ৬৬টি ওয়ার্ড বাদ দেওয়া হয়েছে তার কোনও কাগজপত্র প্রশাসন দেখাতে পারছে না। আইন না মেনে হাওড়া ও বালি পুরসভাকে আলাদা করে ডিলিমিটেশন করা হয়েছে। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এসব করে প্রশাসন কীভাবে পুরভোটের কথা বলছে এই প্রশ্ন আমরা তুলছি।”
এদিনের বৈঠকে অংশ নেওয়া সিপিএম নেতা সুমিত্র অধিকারি বলেন, “হাওড়া পুরসভায় কোনও মনোনীত বোর্ড নেই। তাহলে কীভাবে আইন না মেনে পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে? এছাড়া ভোটার তালিকায় তো ভুয়ো ভোটার এবং মৃত ব্যক্তির নাম রয়ে গিয়েছে। এগুলি সংশোধন না করে প্রশাসন কীভাবে পুরসভা ভোটের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আমরাও চাই পুরসভা নির্বাচন হোক। কিন্তু তা আইন মেনে হোক।” বিরোধীদের তোলা এই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে শাসকদল তৃণমূল।
এদিন সর্বদলীয় বৈঠকে শাসকদলের প্রতিনিধি হিসাবে ছিলেন তৃণমূল নেতা নিলয় ঘোষাল। তিনি বলেন, “ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাস নিয়ে তোলা বিরোধীদের অভিযোগ জেলা প্রশাসন সর্বদলীয় বৈঠকে সংশোধন করে তাদের জানিয়ে দিয়েছে। নতুন করে আপত্তি করে লাভ নেই। ডিলিমিটেশন চূড়ান্ত। এর পর সংরক্ষণের মতো কয়েকটি পদ্ধতি শেষ হলেই পুরভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে।”
এই প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসনের তরফে হাওড়া সদরের মহকুমাশাসক তরুণ ভট্টাচার্য বললেন, “রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের নির্দেশ মেনে ডিলিমিটেশন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তি বা অভিযোগ সংশোধন করে এদিন বৈঠকে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। এবার ডিলিমিটেশনের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে। এর পর আইনগত পদ্ধতি ও রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে পুরসভার ভোট সংক্রান্ত বিষয় পরবর্তী পদক্ষেপ করবে জেলা প্রশাসন।” বিরোধীদের অবশ্য বক্তব্য, প্রশাসন তাদের বক্তব্য না শুনলে তারা প্রয়োজনে আদালতে যাওয়ার ভাবনাও রাখবে।