উত্তর ২৪ পরগনা, আসানসোল, জলপাইগুড়ি: প্রকাশিত হয়েছে আইসিএসই-র ফল (ICSE Class 10th Result)। রবিবার ঠিক বিকেল ৫ নাগাদ ফলাফলের ঘোষণা করা হয়। পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বেরিয়ে গিয়েছে ফলাফল। মেধা তালিকায় প্রথম চারজন ভিন রাজ্যের পড়ুয়া হলেও দেশের মধ্যে দ্বিতীয় ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে প্রথম হয়ে নজর কেড়েছেন একাধিক পড়ুয়া। এর মধ্যে রয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার দক্ষিণেশ্বরের আড়িয়াদহর বাসিন্দা বৈদুর্য ঘোষ। ফলে খুশির হাওয়া এখন ঘোষ পরিবারে। গতকালই বৈদুর্যকে সংবর্ধনা জানাতে তাঁর বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিলেন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র।
বৈদুর্য ঘোষ ব্যরাকপুর মর্ডান ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৮। গতকাল সংবাদ মাধ্যমের সামনে বৈদুর্য জানিয়েছেন যে এতটা ভাল ফল হবে তা আশা করেননি। বৈদুর্য বলেন, ‘আমার সাফল্যের পিছনে বাবা-মা শিক্ষক প্রত্যেকে রয়েছেন। তাই আলাদা করে কাউকে ধন্যবাদ জানাতে চাই না। নির্ধারিত কোনও সময় মেনে আমি পড়াশোনা করতাম না। যা যা বিষয় শেষ করতে হবে তা এক, দু’দিনের মধ্যে রুটিন করে পড়ে নিতাম।’ আগামী দিনে ইঞ্জিনিয়ারিং বা টেকনিক্যাল লাইনে যাওয়ারও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বৈদুর্য।
এ দিন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র যান কৃতি এই ছাত্রের বাড়ি। সেখানে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, বৈদুর্যের জন্য একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সেই অনুষ্ঠানে এলাকার প্রত্যেকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বিধায়ক উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
শুধু বৈদুর্য নয়, দেশের মধ্যে দ্বিতীয় ও রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছেন আরও দুই পড়ুয়া। তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৮। অভয় কুমার সিংহানিয়া ও আলিয়া রফতর। রবিবার আবার অভয়ের জন্মদিন ছিল। ফলত সেই দিনই সাফল্যের খবর পেয়ে খুশি আরও দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে তাঁর। অভয়ের প্রাপ্ত নম্বরের শতাংশ ৯৯.৬।
আসানসোল দক্ষিণের রাহালেনের বাসিন্দা অভয় সিংহানিয়া সেন্ট প্যাট্রিক স্কুলের ছাত্র। বাবা প্রভীন সিংহানিয়া বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। মা গৃহবধূ। অঙ্ক ও জীবন বিজ্ঞান প্রিয় বিষয় অভয়ের। খেলতে খুব ভাল বাসেন এই কৃতি ছাত্র। বিশেষ করে টেবিল টেনিসের প্রতি ন্যাক রয়েছে তাঁর। তবে ওয়েব সিরিজ বা সিনেমা দেখতেন না। এতে পড়াশোনার থেকে মন সরে যেত। দিনে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা পড়াশোনা করত বলে দাবি তাঁর। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়র হতে চান তিনি।
অপরদিকে, আলিয়া রফতের প্রাপ্ত নম্বরের শতাংশ ৯৯.৬। আসানসোল উত্তরের ইসমাইলের বাসিন্দা আলিয়া রাফাত আসানসোল এজি চার্চ স্কুলের ছাত্রী। বাবা মহম্মদ আফসর আলাম প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। মা গৃহবধূ। ফিজিক্স ও জীবন বিজ্ঞান প্রিয় বিষয় আলিয়ার। বাড়িতে টিভি নেই তাই সিনেমা বা বিনোদন থেকে দূরেই থাকতেন তিনি। খেলাধুলাও করতে তেমন একটা ভালবাসে না আলিয়া। তবে বিভিন্ন রকম গল্পের বই পড়তে ও ছবি আঁকতে তিনি ভালোবাসেন। দিনে আট থেকে দশ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন বলে দাবি তাঁর। ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চান। রবিবার আলিয়াকে ভিডিও কলের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
দক্ষিণ বঙ্গের কৃতি পড়ুয়াদের তালিকা শেষ হতে না হতেই চমক দিয়েছে উত্তরবঙ্গও। আলিয়া, অভয়, বৈদুর্যের পাশাপাশি ভাল ফলাফল করে নজর কেড়েছেন জলপাইগুড়ি হোলি চাইল্ড স্কুলের প্রাপ্তি সরকার। আইসিএসসি পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করার পাশাপাশি জেলার মধ্যে প্রথম হয়েছেন তিনি। প্রাপ্তির ৯৯.০২ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি গিটার বাজানোর দিকেও ন্যাক রয়েছে তাঁর। প্রাপ্তি জানান, ‘আমি আশা করেছিলাম এই ফলাফল হবে তবে রাজ্যের মধ্যে যে তৃতীয় হব তা ভাবতে পারিনি। নিয়ম মাফিক কোনও পড়াশোনা করিনি। বই পড়তে ভালবাসি। স্কুল, টিউশন শিক্ষক ও মা-বাবা প্রত্যেকেই আমায় ভীষণ সাহায্য করেছে।’