আসানসোল: সারদার পর ফের সামনে এল ডায়েরি রহস্য। সুদীপ্ত সেন গ্রেফতার হওয়ার পর লাল ডায়েরির প্রসঙ্গ এনেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই (CBI)। যদিও সেই ডায়িরের হদিশ পাওয়া যায়নি। তবে এবার এনামুলের ডায়েরির হদিশ দিল সিবিআই। সেই ডায়েরির প্রসঙ্গ তুলেই এনামুলের জামিন নাকচ করান সিবিআই-এর আইনজীবি।
২০২০ সালে আর জামিন পাওয়া হল না গরুপাচার মামলায় (Cattle Smuggling Case) অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হকের। বুধবার সকালে এনামুলকে আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগার থেকে বিশেষ সিবিআই আদালতে প্রিজন ভ্যানে করে আনা হয়। বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে সকাল থেকে এনামুল হকের আইনজীবীরা তার জামিনের হয়ে জোর সওয়াল করেন। তাঁরা দাবি করেন, এতদিন হেফাজতে নিয়ে জেরা করেও তাঁদের মক্কেলের কাছ থেকে তেমন কোনও তথ্য সিবিআই পায়নি। অর্থাৎ এনামুল জড়িত নয় এই কাণ্ডে। তাঁরা আরও বলেন, এনামুল তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করছে ও আগামিদিনেও করবে। তাই তাকে যে কোনও শর্তে জামিন দেওয়া হোক।
বিরোধিতায় সিবিআই-এর আইনজীবী পাল্টা সওয়াল করে বলেন, এনামুলকে এখনই জামিন দেওয়া হলে এই মামলার অনেক ক্ষতি হবে। সে যথেষ্টই প্রভাবশালী। সে জামিন পেয়ে বাইরে গেলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করবে। প্রমাণ লোপাট করবে। এদিন সওয়াল-জবাব চলার সময় সিবিআই-এর আইনজীবী বিচারকের কাছে একটি ডায়েরি পেশ করেন। বিচারককে আইনজীবী বলেন, এই ডায়েরি তল্লাশির সময় এনামুল হকের বাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে। তাতে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম আছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নামও রয়েছে। যাদেরকে এনামুল তার এই বেআইনি কাজের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিত। কোটি কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলা আছে এই ডায়েরিতে। যদিও সিবিআই-এর আইনজীবী ডায়েরিতে লেখা বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ্য এজলাসে জানাতে চাননি। তিনি বিচারকের কাছে গোপনে বলার আবেদন করেন। কিন্তু বিচারক সেই আবেদন নাকচ করে দিয়ে ডায়েরি জমা করতে বলেন। একইভাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী বিচারককে বলেন, জেরার সময় এনামুল হক সিবিআইয়ের অফিসারদের হুমকি দিয়েছে। এই বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হোক। পাশাপাশি তাকে জেলে পাঠানো হোক।
দীর্ঘ সওয়াল-জবাব শেষে বিকালে বিচারক এনামুল হকের জামিন নাকচ করে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল হাজতের নির্দেশ দেন। এরপর এনামুলকে আদালত থেকে আসানসোল জেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ‘আপনাকে আবার কংগ্রেসের কাছে আসতে হবে, কংগ্রেসের প্রয়োজনে নয়, আপনার নিজের প্রয়োজনে’
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ডিসেম্বর ৫ দিনের সিবিআই রিমান্ড শেষে আসানসোলের সিবিআই আদালতে এনামুলকে তোলা হয়েছিল। তবে সেদিন শুনানি হয়নি। আসানসোল আদালতের এক আইনজীবীর মৃত্যুর কারণে শুনানি স্থগিত করে ৩০ ডিসেম্বর আবার এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন সিবিআই আদালতের বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন এনামুল হকের আইনজীবী হিসাবে ছিলেন ফারুক রাজ্জাক ও শেখর কুণ্ডু। অন্যদিকে সিবিআইয়ের আইনজীবী হিসাবে ছিলেন রাকেশ সিং।
গত ১১ ডিসেম্বর এনামুল হক আসানসোলের সিবিআই আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল। সেদিন সিবিআইয়ের আইনজীবী তাকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য বিচারকের কাছে সওয়াল করেন। কিন্তু বিচারক সেই আবেদন খারিজ করেন ও জামিন নাকচ করে তাকে ১৪ দিনের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর জেল হেফাজতে থাকা এনামুলকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে সিবিআই কলকাতা হাইকোর্টে একটি আবেদন দায়ের করেছিল। সিবিআইয়ের সেই আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ মামলার রায়ে সিবিআইকে ১৯ ডিসেম্বর থেকে ৫ দিনের রিমান্ডের নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: বর্ষবরণের উল্লাস যেন সীমা না ছাড়ায়, সতর্ক করলেন মুখ্যসচিব