জলপাইগুড়ি: যে ‘বাণ’এ মমতাকে বিদ্ধ করতে মরিয়া বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব, সেই ‘বাণ’ই যেন ব্যুমেরাং হল তাঁদের কাছে।
৩৫৬ ধারা বাংলায় জারি করার পক্ষে সওয়াল তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। শুধু দাবিই করলেন না, একেবারে রণংদেহি মূর্তিতে ছুড়ে দিলেন চ্যালেঞ্জও।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায় যে ‘চমকানি’, যে ‘শাসানি’, যে ‘ভয় দেখানো’র রাজনীতি বিজেপি করছে, তা উল্লেখ করে সোমবার জলপাইগুড়ির সভায় চ্যালেঞ্জের সুরে বললেন, “খালি চমকায়। খালি বলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করব। করে দেখাক না একবার, করে দেখাক।” ‘বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে চান আর এর ফলে লাভবান হবেন তিনিই’ ২৪ ঘণ্টা আগেই এহেন দাবি করে বঙ্গ রাজনীতির বিশ্লেষকদের চমকে দিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই রহস্যেরই উন্মোচন করলেন মমতা। বলেন, “রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করলে, আমারই তো অনেক কাজ কমে যাবে। আমি মিটিং মিছিল করে বেরাব আর তোমাদের ভোটটাও সব নিয়ে নেব।”
জলপাইগুড়ির এবিপিসি মাঠের সভায় তখন করতালি। তবে বিস্ময়ও ছিল অনেকের চোখেমুখে। যে কথা যুযুধান পক্ষ বলছে সর্বদা, হঠাত্ নেত্রীর মুখেই এহেন বার্তা! বিস্মিত কর্মীদেরও একাংশ। এদিন কথাগুলো বলার সময় চ্যালেঞ্জের সুরই ছিল মমতার গলায়। নেত্রী যে বিজেপির এই হাতিয়ারকে আর বিশেষ আমল দিতে নারাজ, তা স্পষ্টই বোঝা গিয়েছে তাঁর কথায়, অন্তত এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের।
সম্প্রতি বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের বাংলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমাগতই সুর চড়িয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার ডায়মন্ডহারবারে জেপি নাড্ডা’র গাড়িতে ‘হামলা’ ঘটনা যেন আগুনে ঘি ঢেলেছে। ‘রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে’, ‘৩৫৬ ধারা জারি করলে ভালই হবে’-এহেন দাবি জোরাল হয়েছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের তরফে।
প্রসঙ্গত, এবিষয়ে রাজ্যের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় রাজ্য সরকারকে বিঁধে ও পুলিস প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে একাধিক টুইট করেছেন। এরই মধ্যে গত সোমবার আব্দুল মান্নানও এই বিষয়ে তাঁর কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে টুইট করেন রাজ্যপাল। পরিস্থিতির মধ্যেই দিলীপ ঘোষ তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমাতেই মমতাকে বিঁধতে ‘ব্যতিক্রমী’ দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, “রাজ্যে ৩৫৬ ধারা জারি হলে, দিদিমণি সুবিধা পাবেন। বলবেন, আমাকে সরিয়ে দিয়েছে।” আর সেইকারণেই তাঁরা রাষ্ট্রপতি শাসন চান না বলে স্পষ্ট জানান।
আরও পড়ুন: মমতার পাশে থাকলে কি মিলবে গোর্খাল্যান্ড? এবার গুরুংকে প্রকাশ্যেই প্রচ্ছন্ন বার্তা দিলেন নেত্রী
যখন মুকুল, কৈলাশরা ৩৫৬-র পক্ষে সওয়াল তুলছেন, বাংলার আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তখনও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রজাতান্ত্রিক উপায়ে লড়াইয়ের বুনিয়াদকে শক্ত করছিলেন। তবে কি সেটা এই কারণেই? রাজ্যে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করলে কি সত্যিই ‘এক্সট্রা অ্যাডভানটেজ’ পেয়ে যাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? এহেন জল্পনার মধ্যেই এদিন জলপাইগুড়ির সভামঞ্চ থেকে মমতার ‘বাণ’ কার্যত ফলার মত বিদ্ধ করল বিজেপিকে। অন্তত তেমনই মত বিশেষজ্ঞদের।