জলপাইগুড়ি: সাড়ে তিন বছর পর ফের পাহাড়ে প্রত্যাবর্তন করেছেন গুরুং। চড়েছে রাজনীতি রঙ। গুরুং ইতিমধ্যেই বলেছেন, “বিজেপি কথা রাখেনি। আগামী ২০২১-এ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বিমল মমতাকেই দেখতে চান। ” বিজেপির কথা বলতে গুরুং যে গোর্খাল্যান্ডের প্রসঙ্গই বলতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট ছিল পাহাড়ের একেবারে অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কাছেও। ‘মমতার পাশে থাকার’ বার্তা দিয়ে কি গোর্খাল্যান্ডের দাবিই আদায় করে নিতে চাইছেন গুরুং? রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছিল জল্পনা। জলপাইগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর (CM Mamata Banerjee) এদিনের সভা থেকে মিলল গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে স্পষ্ট বার্তা।
জলপাইগুড়ির এদিনের সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সেই গোর্খাল্যান্ড কিংবা বিমল গুরুং প্রসঙ্গ উত্থাপন করবেন, তা আঁচ করতে পেরেছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। প্রত্যাশিত মতই তা হল। তবে বিমলকে মমতা দিলেন প্রচ্ছন্ন বার্তা। শুরু থেকেই বিজেপিকে এদিন নানা ইস্যুতে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সভার বক্তৃতার কিছুক্ষণের মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় উঠে আসে গোর্খাল্যান্ড প্রসঙ্গ।
তিনি বলেন, “যেই নির্বাচন আসে একটা করে গোর্খাল্যান্ড দেয়, ক’টা গোর্খাল্যান্ড হয়েছে?” এই ইস্যুকে নিয়েই যে এবারও বিজেপি ঘুঁটি সাজাতে পারে, তা আগেই আভাস দিয়ে দেন মমতা। বলেন, ” ওরা ‘১৪-য় বলেছে একটা জিতেছে, ‘১৮য় বলেছে একটা জিতেছে। আমি কিন্তু জিতি নাই। আমি বলি নাই, তাই জিতি নাই।” অর্থাত্ গোর্খাল্যান্ডের প্রতিশ্রুতি তিনি যে এবারও দেবেন না, তা প্রচ্ছন্নভাবে বুঝিয়ে দিলেন বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
সোমবার জলপাইগুড়ির সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “গুরুংকে নিয়ে ৬টা বছর বসেছিল বিজেপি। প্রতিশ্রুতি একটা ভাঁওতা। কোনও প্রতিশ্রুতিই রাখেনি ওরা। মানুষ এখন সেই ভাঁওতা বুঝে গিয়েছে।” গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে মমতার এই বক্তব্য বিমল গুরুঙের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। একুশের নির্বাচনের আগে মমতার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন গুরঙ, তবে গুরুং পাশে থাকলেও, তাঁর গোর্খাল্যান্ডের দাবি যে মেনে নেওয়া হবে না, তাও স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন তিনি।
আরও পড়ুন: মমতার ৯ বাণ: অঙ্কা, বঙ্কা, শঙ্কা আর …
গত নির্বাচনে দলের খারাপ ফল নিয়ে এদিন আক্ষেপের সুর ধরা পড়ে তাঁর গলায়। বলেন, “কী অন্যায় করেছিলাম আমরা, একটাই সিট পাইনি। আমি বলি নাই, তাই জিতি নাই।” এক্ষেত্রেও সেই গোর্খাল্যান্ডের দাবি যে তিনি মানবেন না, তা বুঝিয়ে দেন বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
প্রসঙ্গত, পাহাড়ে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি দীর্ঘদিনের। রাজনৈতিক দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা গুরুঙের নেতৃত্বে থাকাকালীন সেই দাবিতে ইন্ধন জুগিয়েছিল। রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে মান্যতা দেয়নি কখনই। মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকেই অভিযোগ করেন, বিজেপি গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন করে। ‘মিথ্যা প্রতিশ্রুতি’ দিয়ে বিজেপি পাহাড় থেকে জয় ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। এবারের নির্বাচনের আগেও গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে মমতা যে নিজের অবস্থানে অনড়, তাও বুঝিয়ে দেন এদিন।