২১ দিনে ২২২ করোনা রোগীর মৃত্যু উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে!

সৈকত দাস |

May 28, 2021 | 4:46 PM

"বেড ফাঁকা পড়ে আছে। এদিকে করোনা আক্রান্তরা মারা যাচ্ছেন। এটা আমাদের কাছে খুব দুঃখের। মানুষ যেন বাড়িতে না থাকেন।''

২১ দিনে ২২২ করোনা রোগীর মৃত্যু উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে!
নিজস্ব চিত্র

Follow Us

জলপাইগুড়ি: শুধু উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই গত ১ তারিখ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত ২২২ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। শুক্রবার এমনই জানালেন করোনা বিষয়ক ওএসডি সুশান্ত রায়। জেলায় যে ক্রমশ ভয়াল হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি, তা স্বাস্থ্য দফতরের এই ঘোষণাতেই স্পষ্ট।

উত্তরবঙ্গেও বাড়ছে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা। চিন্তা বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের। তবে আশার কথা চা-বাগানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। শুক্রবার ধূপগুড়ির গার্লস কলেজে অস্থায়ী ভাবে নির্মিত সেফ হোমের উদ্বোধনে এসে এই কথা মানলেন উত্তরবঙ্গের দায়িত্বে থাকা ওএসডি করোনা বিষয়ক আধিকারিক ডাঃ সুশান্ত রায়। এজন্য তিনি সরাসরি দায়ী করলেন সাধারণ মানুষের অবহেলাকে। এদিন ধূপগুড়ির গার্লস কলেজে স্থানীয় সেফ হোমের উদ্বোধন করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ গয়ারাম নস্কর, ধূপগুড়ি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা: সুরজিৎ ঘোষ, ধূপগুড়ি পুরসভা চেয়ারপার্সন ভারতী বর্মন, ভাইস চেয়ারম্যান রাজেশ কুমার সিং প্রমুখ। এদিন মোট একশো বেডের সেফ হোমের উদ্বোধন করেন তাঁরা। পরবর্তীতে আরো সাড়ে চারশো বেডের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান।

সেফ হোমের উদ্বোধনের পর তার বিভিন্ন ঘর ঘুরে দেখেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। এবং ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, বাথরুম, পানীয় জলের ব্যবস্থা ঠিকঠাক রয়েছে কিনা এসব খতিয়ে দেখেন তিনি। এবং যে সমস্ত করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হবেন, তাঁদের কী কী পরিষেবা দেওয়া হবে, সেই সমস্ত জিনিস খতিয়ে দেখেন সুশান্তবাবু।

এর পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, উত্তরবঙ্গ গত ১ তারিখ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে ২২২ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। শুধু একদিনে ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত দু দিনে ১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খতিয়ান তুলে ধরেন তিনি। সুশান্তবাবু আরও জানান, সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।

উত্তরবঙ্গে সেফ হাউসের বেড রয়েছে যথেষ্ট সংখ্যক। জলপাইগুড়িতে ১,৩৫০ টি বেড করা হয়েছে। তাঁর কথায়, “বেড ফাঁকা পড়ে আছে। এদিকে করোনা আক্রান্তরা মারা যাচ্ছেন। এটা আমাদের কাছে খুব দুঃখের। মানুষ যেন বাড়িতে না থাকেন।” অর্থাৎ, সেফ হাউস ও চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও মানুষ করোনা আক্রান্ত হলে বাড়িতেই থাকছেন। কিন্তু যে সময় হাসপাতালে আসছেন, তখন কিছু করার থাকছে না বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য আধিকারিক।

তিনি জানান, উত্তরবঙ্গে এখনও পর্যন্ত একটি মাত্র মিউকরমাইকোসিসের কেস পাওয়া গিয়েছে। শিলিগুড়ির নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে তাঁর। তবে তিনি জানান এ নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরে অনাক্রমতা কমে যাওয়ায় কারণে বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তবে চা-বাগান এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেকটাই কমছে। কারণ চা-বাগান শ্রমিকরা বর্তমানে করোনা বিধি মানছেন।

আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনার গ্রাফ নিম্নমুখী, কমল দৈনিক সংক্রমণের হার, গত ৫ দিনে যা সর্বনিম্ন

বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবেই মানছেন তাঁরা। অন্যদিকে শহরতলী থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ আজও এ নিয়ে উদাসীন। যার ফলে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। যা নিয়ে রীতিমত চিন্তার রয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

 

Next Article