আলিপুরদুয়ার: ভোট পরবর্তী অশান্তির জেরে বাড়ি ছাড়া ৪৫ জন বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। বাড়ি ছেয়ে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লার লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানের বাড়িতে। দিল্লি যাওয়ার আগে বানারহাটের লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা। আলিপুরদুয়ার জেলার প্রায় ৪৫ জন বিজেপির জয়ী প্রার্থী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। জানা গিয়েছে, ফালাকাটা বিধানসভার জয়েশ্বর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত ও পলাশবাড়ী গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব কাঠালবাড়ি এবং মাদারিহাট বিধানসভার রাঙ্গালিবাজনা গ্রাম পঞ্চায়েত সহ বিভিন্ন এলাকার বিজেপির এই জয়ী প্রার্থীরা ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরই বাড়ি ছাড়া হয়েছেন। এদের বেশিরভাগই মহিলা, সঙ্গে রয়েছে কোলের শিশুও।
এই জয়ী কর্মীরা কয়েক সপ্তাহ আগে অসমে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখান থেকে সদ্য বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু ফিরে দেখেন অবস্থার পরিবর্তন ঘটেনি। এর পর এই সপ্তাহে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন ঘরছাড়া পঞ্চায়েত সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের লোকেরা। তাঁদের সমস্ত থাকার খাবার ব্যবস্থা করছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিজেই।
রবিবার মন্ত্রী জন বার্লা বলেছেন, “বিজেপির এই প্রার্থীদের দলত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য লাগাতার চাপ ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এরই জেরে তাঁরা ঘরছাড়া। পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন না হওয়া পর্যন্ত এই ৪৫ জন আমার বাড়িতেই থাকবে।” জন বার্লা জানান, জটেশ্বর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩/১৪২ পার্টের বিজয়ী প্রার্থী লক্ষ্মী পাল, ১৩/১৪৬ পার্টের চায়না সরকার, পলাশবাড়ী গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব কাঠালবাড়ি ১৩/২৫৩ পার্টের টিংকু ভৌমিক দে, ১৩/২৫১ পার্টের মামনি বর্মন, ১৩/২৪৯ পার্টের মমতা বর্মন, রাঙ্গালিবাজনা ১৪/১০৬ পার্টের সঙ্গীতা টিজ্ঞা ভগত, ১৪/১১৯ পার্টের তনুশ্রী বর্মন রায়- সকলেরই একই বক্তব্য, দল বদল করে তৃণমূলে যোগ দিতে না চাওয়ায় তারা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই বাড়ি ছাড়া হয়েছেন।
বিজেপি এর টিকিটে জয়ী ঘর ছাড়া পঞ্চায়েত সদস্য লক্ষ্মী পাল, টিঙ্কু ভৌমিক দে জানিয়েছেন, জয়েশ্বর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ২১ টি। এতে বিজেপি ১১, তৃণমূল ৮, সিপিএম ১, নির্দল ১টি আসনে জয়ী হয়েছে। পলাশবাড়ী গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ২৩টি, বিজেপি ১২, তৃণমূল ৬, সিপিএম ৩, আর.আর.পি ১, নির্দল ১টি আসনে বিজয়ী। রাঙ্গালিবাজনায় গ্রাম পঞ্চায়েতে ২৩টি আসনে বিজেপি ১০, তৃণমূল ১০, সিপিএম ২, নির্দল ১টি আসনে জয়ী। এই পঞ্চায়েত গুলিতে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েছে। ফলে বিজেপির বিজয়ী প্রার্থীদের দল বদল করিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে বোর্ড গঠনের জন্য তৃণমূল মরিয়া প্রয়াস চালাচ্ছে বলে অভিযোগ।
রাজ্যের বিরোধীদল নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, “অপহরণ এবং পুলিশের মিথ্যা মামলার ভয়ে এক জায়গায় শিবির করে আছেন। চেষ্টা করছেন সবাই এক জায়গায় থেকে একসঙ্গে প্রতিরোধ করার।” যদিও গোটা অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসকদল তৃণমূল। তৃণমূল নেতা রাজেশ কুমার সিং বলেন, “এইগুলো সাজানো ঘটনা। নির্বাচনের পর কোথাও কোন সন্ত্রাস বা অশান্তি হয়নি। বিজেপি প্রচার পাওয়ার জন্য এগুলো করছে।”