TV9 বাংলা: ময়নাগুড়ির রেল দুর্ঘটনা নিয়ে একাধিক প্রশ্নের উত্থাপন। শীতে রেললাইনে সংকোচন প্রসারণ স্বাভাবিক ঘটনা? গ্যাংমানদের নজরদারি কি ছিল না? গুয়াহাটি বিকানির এক্সপ্রেসের সব বগি নিয়মিত পরীক্ষা হত? কেন ওই ট্রেনে এলএইচবি কোচ লাগানো হয়নি? এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে রেলমন্ত্রককে। পাশাপাশি রেলের ভূমিকা নিয়েই উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন। রেল ইউনিয়নগুলির কথাতেই উঠে আসছে একাধিক ফাঁক ফোকড়ের কথা। পরিকাঠামো-রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, বেসরকারি সংস্থার হাতে রেলের ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব, নিয়োগে ঢিলেমি- রেলের একাধিক ‘অক্ষমতার’ তথ্য উঠে আসছে।
TV9 বাংলার কাছে সরব হয়েছেন হয়েছেন রেল ইউনিয়নের একাধিক কর্তা ব্যক্তিরা। ইস্টার্ন রেল মেনস ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি অমিত ঘোষ বলেন, “সাধারণ যাত্রীদের জানিয়ে রাখি, রেলের নিজের বলে আর কিছু নেই। না আছে কর্মী, না আছে রক্ষণাবেক্ষণ। রেলের ড্রাইভার, গার্ড, স্টেশনমাস্টার, সিগন্যালম্যানের ডিউটির কোনও শেষ নেই। ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন তাঁরা। লোক নেই। না আছে ট্র্যাক মেইনটেইন করার সঠিক ব্যবস্থা। আসলে লোক নিয়োগ করেনি সরকার। ভোট নিয়োগের কথা ভেবেই লক্ষ লোক নিয়োগের কথা বলেছিল। কিন্তু সবই ধাপ্পাবাজি।”
এই দুর্ঘটনার জন্য রেলের বেহাল পরিকাঠামোকেই দায়ী করেছেন তিনি। অন্যদিকে, নর্থ ফ্রন্টটিয়ার রেলওয়ে মজদুর ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি পরিতোষ পাল বলেন, “যান্ত্রিক ক্রুটির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। রেলমন্ত্রীও প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে সে কথা বলেছেন।”
তবে রেলের পরিকাঠামোর অবস্থা যে বেহাল, সেকথা উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “রেলের ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এখন বেসরকারি সংস্থার হাতে দিয়ে দেওয়া হয়। আদৌ সেই কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, তা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। রেলের গত তিন বছর ধরে কোনও নিয়োগ হচ্ছে না। প্রত্যেক বছর ৪-৫ শতাংশ লোক অবসর নেন। সেক্ষেত্রে সেই ঘাটতি পূরণ করবে কে? ”
রেলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরাও। তাঁদের একাংশ ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছে, রেলের নিম্নমানের বগিগুলিকেই বাংলার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। একই অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। দুর্ঘটনার পিছনে রেলের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন তিনি। পাশাপাশি শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও।
উত্তরবঙ্গে ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুললেন বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। ফেসবুকে তাঁর চাঞ্চল্যকর মন্তব্য, ‘ সামনে নির্বাচন, অনেক বছর রেল নিয়ে কোনও বাজে খবর হয়নি৷ মানুষের প্রাণ নিয়ে ছেলেখেলা৷’ এই মন্তব্য করার পাশাপাশি বিকানের এক্সপ্রেসের বেলাইন হওয়ার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ৷
এদিকে ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও। তাঁরও প্রশ্ন, কেন পুরনো কোচগুলিকে ব্যবহার করছে রেল? কেন এত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব?
তবে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ এদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, “আমি নিজে সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখেছি। আচমকা যান্ত্রিক ত্রুটির জন্যই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেক্ষেত্রে যে ইক্যুইপমেন্টগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলি সংগ্রহ করে ভাল করে খতিয়ে দেখা হবে। সেখানে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না। সেক্ষেত্রে বেশ কিছু চিহ্নও পাওয়া যেতে পারে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে। ঘটনার শিকড়ে গিয়ে তদন্ত করা হবে।”