জলপাইগুড়ি: জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সাবধানে যাবেন। ক্যামেরার সামনেই বিজেপি নেতাদের এই হুঁশিয়ারি দিলেন সাসপেন্ড হওয়া বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতারা। বৃহস্পতিবার দল বিরোধী কাজের জন্য চার নেতাকে বহিষ্কার করে জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপি। এরপরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। বহিষ্কৃত চার নেতা হলেন, অলোক চক্রবর্তী, অনুপ পাল, গৌতম সরকার ও তপন মোহন্ত।
শুক্রবার জলপাইগুড়ি প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে দলের জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর বিরুদ্ধে ফের রীতিমতো তোপ দাগলেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, জেলা সভাপতি নিজের ইচ্ছা মতো দল চালাচ্ছেন। দলের অনুশাসন মানছেন না। তাঁদের বক্তব্য, দল যদি কাউকে বরখাস্ত করে বা বহিষ্কার করে তার জন্য রাজ্য কমিটির অনুমোদন লাগে। পাশাপাশি দলীয় নিয়ম অনুযায়ী দলের জেলা সভাপতির স্বাক্ষর থাকতে হবে বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, দলের যে প্যাডে তাঁদের বহিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে, তাতে জেলা সভাপতির স্বাক্ষর নেই। তাছাড়াও দলের তরফে তাঁরা বহিষ্কারের কোনও চিঠি পাননি বলেও জানিয়েছেন। ফলে তাঁরা এই সাসপেনশন মানেন না বলে দাবি করেছেন নেতারা।
এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা অলোক চক্রবর্তী দাবি করেন, জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী বিধানসভা নির্বাচনে ময়নাগুড়িতে তাঁদের দলীয় প্রার্থীকে হারানোর জন্য তাঁদের কর্মীদেরই নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং দলীয় অফিস ভাঙচুর করিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলের অসহায় কর্মীদের সাহায্যের জন্য যে টাকা পাঠায় তার সবটাই আত্মসাৎ করে নিজেরা অট্টালিকা তৈরি করেছেন বলেও অভিযোগ করেন অলোক চক্রবর্তী। কার্যত হুমকির সুরে তিনি বলেন, ‘আমরা জেলা ও রাজ্য নেতাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। অনৈতিক ভাবে সাসপেন্ড করায় জেলায় সাধারণ কর্মীদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তারা এই সমস্ত দুর্নীতিবাজ নেতাদের দেখলে যখন তখন যা খুশি করে দিতে পারে।’ একই সঙ্গে তারা জেলার বিভিন্ন কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন অলোক চক্রবর্তী।
অপরদিকে দলের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক দধিরাম রায়। তিনি বলেন, ‘রাজ্যের নির্দেশে আমরা এদের সাসপেন্ড করেছি। এই মর্মে দলীয় প্যাডে সাসপেন্ড নোটিস আমরা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে তাঁদের ঠিকানায় পাঠিয়েছি। এ ছাড়া হোয়াটসঅ্যাপে একটি কপি পাঠানো হয়েছে। আপাতত ৪ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আরও নাম রাজ্য কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন এলেই জানিয়ে দেওয়া হবে।’ এই জাতীয় অন্যায় বিজেপি কোনও ভাবে বরদাস্ত করবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বিধানসভা ভোটের প্রার্থী চয়ন নিয়েই জেলা বিজেপিতে গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছিল। সেই সময় থেকেই এই কোন্দল চরম আকার নেয়। বর্তমান জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী ও প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা বর্তমানে রাজ্য বিজেপির এক্সিকিউটিভ সদস্য দীপেন প্রামাণিকের মধ্যে দুই গোষ্ঠীর লড়াই চলছে। দলবিরোধী কাজের জন্য যে চার নেতাকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, এরা সবাই দীপেন প্রামাণিকের গোষ্ঠীর নেতা বলেই সূত্রের খবর।