জলপাইগুড়ি: শরীরে ২০ টি সেলাই নিয়ে আবার পরিবেশে ফিরে যাবে পাইথন। চিকিৎসায় সাড়া দেওয়ায় আশায় বুক বাঁধছেন চিকিৎসক থেকে পরিবেশ কর্মীরা। ক্ষতবিক্ষত বার্মিজ পাইথনকে উদ্ধারের পর প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে ওয়াশ করে চলে শুশ্রূষা। এরপর দেহে কুড়িটি সেলাই পড়ে। তারপর বেশ কিচ্ছুক্ষণ নিরীক্ষার পর জেগে ওঠে সাপটি। পরিবেশ কর্মী ও চিকিৎসকের যৌথ প্রচেষ্টায় প্রাণে বাঁচে শিডিউল ওয়ানের এই বন্যপ্রাণী।
সিকিমে মেঘ ভাঙা বৃষ্টির জলের তোড় পাহাড় থেকে সমতলের প্রচুর এলাকার বাড়িঘর, গাছ পালা, ভাসিয়ে নিয়ে তিস্তা নদীতে ফেলেছে। পাশাপাশি জলের তোড়ে ভেসে মারা গিয়েছেন প্রচুর মানুষ। নিখোঁজ শতাধিক ব্যাক্তি। এইসবের সঙ্গেই জলে ভেসে যায় প্রচুর বন্যপ্রাণী। তেমনই একটি ক্ষতবিক্ষত বার্মিজ পাইথন পরিবেশ কর্মীর হাত ধরে শুক্রবার উদ্ধার হয়েছে তিস্তার মণ্ডলঘাট গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায়। উদ্ধারের পর পাইথনটিকে পশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে।
কীভাবে উদ্ধার হল বার্মিজ পাইথন?
সূত্রের খবর, শুক্রবার দুপুরে জলপাইগুড়ির পরিবেশ কর্মী বিশ্বজিৎ দত্ত চৌধুরীর কাছে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের মণ্ডলঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের তাঁতি পাড়া এলাকার এক বাসিন্দা ফোন করে জানান তিস্তা নদীর মাঝ চড়ে একটি পাইথন চাপা পড়ে আছে। তার শরীরে তার পেচিয়ে থাকায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, তখনও দেহে রয়েছে প্রাণ। কিন্তু, আরও কিছুক্ষণ এইভাবে পড়ে থাকলে বাঁচানো দুষ্কর হয়ে যাবে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান বিশ্বজিতবাবু এরপর তিস্তার বাঁধ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার জল কাদা পেরিয়ে গিয়ে সাপটিকে উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি পশু হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে সাপটি।
বিশ্বজিৎ দত্ত চৌধুরী বলেন, খবর পেয়ে আমি আর দেরি করিনি। সঙ্গে সঙ্গে বাইক নিয়ে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি প্রায় নয় ফুট লম্বা একটি বার্মিজ পাইথন। তার গায়ে তার পেচিয়ে থাকায় মারাত্মকভাবে আঘাত পেয়েছে। আমি সাপটিকে নিয়ে পশু হাসপাতালে আসি। সাপটিকে দেখেই ডাক্তারবাবু প্রথমে ভালভাবে ওয়াশ করে। এরপর তার শরীরের ক্ষতস্থানে একের পর এক সেলাই দিতে থাকেন। তারপর প্রয়োজনীয় ওষুধ দেন। কিছুক্ষন পর সাপটি সুস্থ হয়ে ওঠে। এরপর আমি সাপটিকে বনদপ্তরের হাতে তুলে দিই।
জলপাইগুড়ি পশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার রাজেশ্বর সিং বলেন, সাপটিকে ওষুধ প্রয়োগের পাশাপাশি কুড়িটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বন্যায় মানুষের পাশাপাশি প্রচুর বন্যপ্রাণী ভেসে গিয়েছে। কোথাও যদি কোনও বন্যপ্রানীকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পান তবে আমাদের খবর দিন। আমরা ব্যাবস্থা নেব।
ঘটনায় গরুমারা ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশনের এ ডি এফ ও জন্মেঞ্জয় পাল জানিয়েছেন, বার্মিজ পাইথনটি আমরা বিশ্বজিৎ দত্ত চৌধুরীর কাছ থেকে জমা নেওয়ার পর তাকে ফের গরুমারা প্রকৃতি বিক্ষন কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। সম্পূর্ণ সুস্থ হলে তার উপযুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হবে।