আলিপুরদুয়ার: বাঁদর বাঁচাতে গাছের উপর ঝুলন্ত ব্রিজ বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের।এই অভিনব উদ্যোগ” রাজাভাতখাওয়া– জয়ন্তীর রাস্তায়। গাছের উপর ঝুলন্ত ব্রিজ বানিয়ে তাক লাগালো বন দফতর।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে ট্র্যাপ ক্যামেরায় বাঘের ছবি পাওয়া যাওয়ায় বাঘ নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। বাঘ বাঁচাতে একাধিক উদ্যেগের পাশাপাশি এবার নব সংযোজন বাঁদর। বাঁদর বাঁচাতেও উদ্যোগী হল বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। জয়ন্তী রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ির হাত থেকে বাঁদর বাঁচাতে অভিনব উদ্যোগ নিল তারা।
বাঁদর বাঁচাতে রাজাভাতখাওয়া থেকে জয়ন্তী পর্যন্ত ঝুলন্ত ব্রিজ বানালো বন দপ্তর।পরীক্ষা মূলক ওই ব্রিজ কার্যকারী ভূমিকাও নিচ্ছে বলে বন দপ্তর জানিয়েছে।রাস্তার এক পাশের উঁচু গাছ থেকে আরেক পাশের উঁচু গাছের উপর এই ঝুলন্ত ব্রিজ বানালো হয়েছে।ব্রিজ গুলি বাঁশ,দঁড়ি এবং বিশেষ ধরনের তার দিয়ে বানানো হয়েছে।রাস্তা দিয়ে পারাপারের বদলে বাঁদর এখন থেকে ওই ঝুলন্ত ব্রিজ দিয়েই পারাপার করছে বলে বন দপ্তর জানিয়েছে।বাঁদর বাঁচাতে বন দপ্তরের এই অভিনব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন পশু প্রেমি সংস্থা থেকে সাধারণ মানুষ।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা(এফডি) বুদ্ধরাজ শেওয়া বলেন,জয়ন্তী রুটে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চলাচল করে। এর ফলে রাস্তার ধারে থাকা বহু বাঁদরের মৃত্যু হয়।তাই বাঁদর বাঁচাতে আমরা পরীক্ষা মূলকভাবে কিছু ঝুলন্ত ব্রিজ বানিয়েছি।আমাদের পরিকল্পনা সফল হলে আগামী দিনে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গাছের উপর এই ঝুলন্ত ব্রিজ বানানো হবে।এছাড়াও দ্রুতগামি গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে।
বন দপ্তরের এই উদ্যোগে খুশি আলিপুরদুয়ারের পশু প্রেমিরা।পশুদের নিয়ে কাজ করা আলিপুরদুয়ার বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সংস্থার সম্পাদক কৌশিক দে বলেন,আমরাও দেখেছি বক্সার জঙ্গলে বিভিন্ন সময় গাড়ির বলি হয় বাঁদর সহ অন্য বন্য প্রানী।আবার বাঁদর বাঁচাতে গাড়ি দুর্ঘটনার খবরও পাওয়া গেছে।এই অবস্থায় বাঁদর বাঁচাতে রাস্তার উপর ঝুলন্ত ব্রিজ খুব কার্যকারী পদক্ষেপ।বন দপ্তরের এমন উদ্যোগে আমরা খুশি।
পশু প্রেমী বাবুন দাস বলেন,বিদেশের কিছু জায়গায় দেখেছি ছোটো ছোটো বন্য প্রাণী বাঁচাতে রাস্তার উপর দিয়ে গাছের মধ্যে ঝুলন্ত ব্রিজ বানালো হয়।বক্সাতেও এমন ঝুলন্ত ব্রিজ খুব কার্যকারী পদক্ষেপ।তবে দমনপুর থেকে রাজাভাতখাওয়া এবং সেখান থেকে জয়ন্তী পর্যন্ত গাছের উপর এমন ঝুলন্ত ব্রিজ বানালে আরও কার্যকরী হবে।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প সূত্রে জানাগেছে,দমনপুর থেকে রাজাভাতখাওয়া এবং জয়ন্তী পর্যন্ত পূর্ত দপ্তরের পাকা রাস্তা রয়েছে।এই রাস্তার দু’পাশেই বক্সার গভীর জঙ্গল।এই রাস্তা দিয়ে সারাদিন রাত প্রচুর গাড়ি চলাচল করে।অভিযোগ,এই রাস্তাতেই অনেক সময় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চলাচল করে।
স্থানীয় বন কর্মীরা জানিয়েছেন, বিশেষ করে রাজাভাতখাওয়া থেকে জয়ন্তীর রাস্তায় দ্রুতগামী প্রচুর ছোট গাড়ি চলাচল করে।গাড়ির চালকরা বেশিরভাগই মদ্যপ অবস্থায় থাকেন। বিনা বাধায় জঙ্গলের এই পথে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চলাচল করে।ফলে মাঝেমধ্যেই আহত হয় বন্যপ্রাণীরা।
বিশেষ করে জঙ্গল থেকে রাস্তার দু’ধারে প্রচুর বাঁদর বসে থাকে। মদ্যপ গাড়ি চালকদের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অনেক সময় গাড়ির নীচে চলে আসে বাঁদর। এই ভাবে প্রায় দিনই বক্সার জঙ্গলের একাধিক জায়গায় রোজ বাঁদরের মৃত্যু ঘটে। এও জানা গিয়েছে, অনেকে আবার বাঁদর বাঁচাতে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েও দূর্ঘটনার কবলেও পড়েন।
রাজাভাতখাওয়ার স্থানীয় বাসিন্দা অ্যালবার্ট সাংমা বলেন, বক্সার জঙ্গলে চলাচলকারী গাড়ি গুলো থেকে অনেকেই বাঁদরের জন্য খাবার ছুড়ে দেন। ওই খাবারের লোভে বাঁদর রাস্তার উপরে চলে আসে। দ্রুত গতিতে আসা গাড়ি অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাঁদরদের ধাক্কা মারে। ফলে গাড়ির ধাক্কায় বাঁদরের মৃত্যু হয়। এই ভাবে মাঝেমধ্যেই অনেক বাঁদর মারা যাচ্ছে জঙ্গলের রাস্তায়।
এদিকে বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজাভাতখাওয়া থেকে জয়ন্তীর রাস্তায় দু’তিন জায়গায় গাছের উপর এমন ঝুলন্ত ব্রিজ বানিয়েছে বন দফতর। রাস্তার এক পাশ থেকে আরেক পাশের উঁচু গাছের মধ্যে ঝুলন্ত ব্রিজ বানানো হয়েছে। এছাড়াও দ্রুতগামী গাড়ি নিয়ন্ত্রনের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা। এর জন্য বন দফতর তিনটি বিশেষ দল গঠন করেছে। জঙ্গলের রাস্তায় ওই টিম গাড়িতে করে নজরদারি চালাবে।। দ্রুতগামী কোনও গাড়ি চললে তাদের থামানো হবে।প্রথমবার সতর্কও করা হবে। দ্বিতীয় বার ধরা পড়লে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বন কর্তারা জানিয়েছেন। বাঁদর বাঁচাতে ঝুলন্ত ব্রিজ এক অভিনব উদ্যেগ বনদফতরের। এখন এটা দেখতে হাজির হচ্ছেন পর্যটকরাও।
আরও পড়ুন: Fake Coconut Oil: শীতে চুলের যত্ন নিতে নারকেল তেল লাগাচ্ছেন? দেখে নিন আদৌ কোন ‘বিষ’ ব্যবহার করছেন…