জলপাইগুড়ি: স্ত্রী থাকতেও অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক। কোনওভাবে জেনে গিয়েছিলেন স্ত্রী। পরে বিষয়টি জানাজানি হতেই চরম পদক্ষেপ নিল স্বামী। গৃহবধূকে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠল ওই ব্যক্তি ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হতেই তদন্তে পুলিশ। পলাতক অভিযুক্তরা। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার ও কঠিন শাস্তির দাবিতে সরব মৃতের পরিবারের সদস্যরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত বেলাকোবা অঞ্চলের তুরুকভিটা গ্রামের বাসিন্দা স্বপন রায়ের সঙ্গে ২০১৯ সালে সম্ভন্দ করে বিয়ে হয় পাশ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা ঝুনু রায়ের। অভিযোগ, বিয়েতে পাত্রপক্ষ দাবি করেছিল স্কুটি সহ অন্যান্য সামগ্রী। পাত্রীর বাড়ির লোকজন তা যৌতুক হিসেবে দিয়েও দেয়। অভিযোগ, এরপরও নগদ টাকার দাবিতে বিয়ের পর থেকে ঝুনুকে মারধর ও দেখতে ভাল না বলে মানসিক অত্যাচার করতেন শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। এরপর জামাইকে এক লক্ষ টাকা দেয় মেয়ের বাপের বাড়ির লোকেরা। তারপর কয়েক বছর সব ঠিকই চলছিল।
অভিযোগ, কয়েকমাস আগে জামাই স্বপন রায়ের সঙ্গে এক মহিলার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি নিয়ে ঝুনু প্রতিবাদ করতেই নতুন করে নির্যাতন শুরু হয়। কিছুদিন আগেও নাকি ঝুনুকে পাগল অপবাদ দিয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর গৃহবধূ আশ্রয় নেন বাপের বাড়িতে। সেখানে তাঁরা মানসিক বিশেষজ্ঞকে দেখালে চিকিৎসক ঝুনুকে স্বাভাবিক বলে জানান। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে চাইলে গৃহবধূর স্বামী পরিবারের সদস্যরা মিমাংসা করে বাড়িতে নিয়ে যায় মেয়েকে।
অভিযোগ, চলতি মাসের ১৫ তারিখ ঝুনু রায়ের স্বামী স্বপন রায় তাঁর শ্বশুরবাড়িতে জানায় ঝুনু অসুস্থ হয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে তাঁকে। এরপর ঝুনুর পরিবারের সদস্যরা মেডিক্যাল কলেজে এসে দেখে ঝুনুর মুখ দিয়ে ফেনা উঠছে। শুক্রবার বিকেলে ঝুনু সেখানেই মারা যায়। এরপরই গতকাল রাতে স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
শনিবার মৃতার দেহের ময়নাতদন্ত হয় জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে। এরপর তাঁর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেয় পুলিশ।
ঝুনুর বোন রিম্পা রায় অভিযোগ করে বলেন, “বিয়েতে যৌতুক দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও পণের জন্য অত্যাচার চালাত দিদির শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। গতকাল বলা হয় দিদি অসুস্থ হয়েছে। আমরা বলি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করতে। এরপর এসে দেখি দিদির মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। আর দিদিকে ভর্তি করে দিয়ে পালিয়ে গেছে জামাইবাবু। আমাদের ধারণা দিদিকে বিষ জাতীয় কিছু খাইয়ে খুন করা হয়েছে।”
মৃতার বাবা বাবলু রায় বলেন, “শ্বশুর বাড়ির অত্যাচারে আমার মেয়ে মারা গেছে। আমি জামাই সহ মোট চারজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। অভিযুক্তদের কঠিন শান্তি চাই।” অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার পুলিশ।