জলপাইগুড়ি: কয়েক বছর আগে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভাগাড়ের মাংস নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল। রাস্তার পাশের ছোট হোটেল থেকে থ্রি স্টার রেস্তোরাঁ, বিভিন্ন নামজাদা খাবারের দোকানে এই পচা মাংস ব্যবহারের অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় হয় রাজ্য। শিলিগুড়ি সংলগ্ন জলপাইগুড়ি জেলার স্থানীয় হোটেলগুলিতে দেশি মুরগির মাংসর নামে যা দেওয়া হচ্ছে, তা কি আদৌ মুরগির মাংস নাকি অন্য কোনও পাখির? রবিবার বনকর্তার মন্তব্যে উস্কানি পেল সে প্রশ্নই। গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের বনকর্মীদের কাছে বেশ কিছুদিন ধরে খবর আসছিল, জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের মণ্ডলঘাট এলাকায় তিস্তার চড় ও সংলগ্ন ধানিজমি গুলিতে প্রতিদিন শিলিগুড়ি থেকে ব্যাধের দল আসছে।
সেই দল প্রতিদিন মণ্ডলঘাট এলাকা থেকে নাইট হেরন, স্পটেড ডোভ, ওরিয়েন্টাল টার্টেল ডোভ, ওয়াটার হেন-সহ বিভিন্ন ধরনের পাখি শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। একেকদিন তারা ৭-৮ ব্যাগ পাখি শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। পাখি শিকারের পরিমাণ প্রতিদিন গড়ে আনুমানিক ১৫০-২০০টি পর্যন্ত হতে পারে বলে খবর আসে বনকর্মীদের কাছে। এরপর তাঁরা সেই খবর বনকর্তাদের জানালে এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেন এডিএফও জন্মেজয় পাল।
রবিবার বিকেলে খবর আসে ফের পাখি শিকার করতে এসেছে ব্যাধের দল। সেই খবর পেয়ে এডিএফও জন্মেজয় পালের নেতৃত্বে একটি বড় দল বেরিয়ে পড়ে। মণ্ডলঘাটে পৌঁছে তিনটি দলে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে তারা। সেখানে অভিযান চালিয়ে দু’জন নাবালক-সহ মোট চারজন পাখি শিকারীকে গ্রেফতার করে। আরও কয়েকজন দলে ছিলেন। তাঁরা পালিয়ে যান বলে বনদফতর সূত্রে খবর। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু দুর্লভ পাখির মৃতদেহ এবং পাখি শিকার করার বিভিন্ন অস্ত্র।
এডিএফও জন্মেজয় পাল জানান, “গোপন সূত্রে খবর পেয়ে আমরা অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করি। কয়েকজন পালিয়ে গিয়েছে। এরা সবাই শিলিগুড়িতে থাকে। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের বিলুপ্তপ্রায় পাখির মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। আমাদের কাছে নির্দিষ্টভাবে খবর ছিল এরা প্রচুর পাখি শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। তবে এত পরিমাণ মাংস একা কোনও মানুষের পক্ষে খাওয়া সম্ভব নয়। এই পাখি শুধু নিজেদের খাওয়ার জন্য মেরেছে এমন নয়, স্থানীয় হোটেলকে হয়ত দিত। হতে পারে স্থানীয় হোটেল এটাকে দেশী মুরগি বলে চালাত! নিশ্চিত করে তো কিছু বলতে পারব না। তবে হতে পারে এরা এই মাংস স্থানীয় কিছু অসাধু হোটেল মালিকদের কাছে বিক্রি করত।” সোমবার ধৃতদের আদালতে তোলা হবে। একইসঙ্গে এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচারও করছে বনদফতর।