Jalpaiguri: শবযানের টাকা নেই, মায়ের দেহ কাঁধে তুলেই শ্মশানের উদ্দেশে ছেলে, এই ছবি ফিরল বাংলায়

TV9 Bangla Digital | Edited By: শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী

Jan 05, 2023 | 4:41 PM

Jalpaiguri:শোকসন্তপ কাঁধে মায়ের নিথর দেহ। এই ছবি অন্য রাজ্যের নয়, খোদ বাংলার। ঘটনাটি জলপাইগুড়ি জেলার ক্রানি এলাকার।

Jalpaiguri: শবযানের টাকা নেই, মায়ের দেহ কাঁধে তুলেই শ্মশানের উদ্দেশে ছেলে, এই ছবি ফিরল বাংলায়
জলপাইগুড়িতে মর্মান্তিক ছবি

Follow Us

জলপাইগুড়ি: শবযানে দেহ নিয়ে যেতে গেলে লাগবে তিন হাজার টাকা। দিনমজুরির আয় শেষ মায়ের চিকিৎসা আর গার্হস্থ্য অনুশাসনেই। অগত্যা টাকা জোগাড় করতে না পেরে মায়ের শবদেহ চাদরে পেঁচিয়ে কাঁধে তুলেই শ্মশানের উদ্দেশে হেঁটে রওনা দিলেন ছেলে। সঙ্গ দিলেন অসহায় বৃদ্ধ বাবা। শোকসন্তপ পুত্রের কাঁধে মায়ের নিথর দেহ। এই ছবি অন্য রাজ্যের নয়, খোদ বাংলার। ঘটনাটি জলপাইগুড়ি জেলার ক্রানি এলাকার। বৃহস্পতিবারের ঠান্ডায় জুবুথুবু বাংলা। তার মধ্যে ভীষণরকমভাবে মনে চিড় ধরাল জলপাইগুড়ির এই দৃশ্য। একটি দেহ চাদরে পেঁচিয়ে কাঁধে নিয়ে রাস্তার ধার দিয়ে কার্যত জোর পায়ে হাঁটার চেষ্টা করছেন বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি। পিছনের সেই দেহকেই কাঁধ দিয়েছেন সত্তরের এক বৃদ্ধ। আশপাশের বাসিন্দারা দাঁড়িয়ে দেখছেন। কিছুটা গিয়ে হাঁপিয়ে পড়ছেন তাঁরা। দেহ রাস্তায় নামাচ্ছেন। কিছুটা জিরিয়ে ফের কাঁধে তুলে হাঁটা। খোঁজ করতে জানা যায়, ওই দেহটি জলপাইগুড়ি জেলার ক্রানি ব্লকের বাসিন্দা লক্ষীরানি দেওয়ানের। বুধবার জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য তিন হাজার টাকা চান স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স। টাকা দেওয়ার সামর্থ নেই। তাই দেহ এভাবেই নিয়ে যাচ্ছেন ছেলে ও স্বামী।

জলপাইগুড়ি থেকে ক্রান্তি দূরত্ব প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার। দেহ কাঁধে তুলে নেন ছেলে ও স্বামী। পাশেই হেঁটে যাচ্ছিলেন এক মহিলা। সাত সকালে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার এই করুন ছবি নাড়া দিয়েছে অনেককেই। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিনামূল্যে পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে হাসপাতালের ভেতর যারা বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স এবং শহবাহী গাড়ির পরিষেবা দিয়ে থাকেন, তাঁদের দর হাঁকানো নিয়েও। অভিযোগ উঠছে, সেখানে একটি দালালচক্র কাজ করে। শেষ পর্যন্ত খবরটি পৌঁছয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা এগিয়ে আসেন।

নিয়ম অনুযায়ী, একটি সরকারি হাসপাতালে যখন কোনও রোগীর মৃত্যু হয়, তখনই দেহ পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয় না। অন্ততপক্ষে চার ঘণ্টা সময় লাগে। এই চার ঘণ্টা কাজ করে হাসপাতালের ‘ফেসিলিটি’ বিভাগ। ডেথ সার্টিফিকেট তৈরির পাশাপাশি, রোগীর পরিজনদের কাছেও জানতে চাওয়া হয়, দেহ কীভাবে নিয়ে যাবেন? গাড়ির কি কোনও ব্যবস্থা হয়েছে? সেক্ষেত্রে এই ঘটনায় কি কোনওভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন? প্রশ্ন থাকছেই।

বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “মায়ের মৃতদেহ নয়। এটা বাংলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শবদেহকে শ্মশানের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন ওঁর ছেলে। এখন প্রতিক্রিয়া দিতেও দ্বিধাবোধ করি। এটা ভয়ঙ্কর ঘটনা। রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থা কোথায় পৌঁছছে সেটা ভাবার আছে। আজকে সমাজের অবস্থা কোথায় পৌঁছছে, একটা শববাহী গাড়িও জোগাড় করতে পারছে না।”

নাট্য ব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন বলেন, “এটাই বাস্তব। এটা কিন্তু আগামী দিনেও হতে পারে। নতুন বছর কিছু আসেনি। দায় আমাদের প্রত্যেকের। যবে থেকে আর্থিক বৈষম্য শুরু হয়েছে, তবে থেকে এই দৃশ্য আরও বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে। ভয়াবহ ছবি।”

তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, “দেশের মধ্যে বাংলাই একমাত্র রাজ্য যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর দৌলতে ১১ কোটি মানুষের সবাই সরকারি বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা পান। গরিব মানুষে সমব্যথী প্রকল্পের সুযোগ পান। তার মধ্যেও কোনও অসাধু ব্যক্তি এমন কাজ করে থাকেন, তাকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এটা বাংলার সার্বিক চিত্র নয়।” ভোপালে মেয়ের দেহ কাঁধে তুলে শ্মশানে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছিল বাবাকে। ভোপালেই আবার শববাহী গাড়ি না পেয়ে ভাগ্নি দেহ কোলে নিয়ে বাসে উঠেছিলেন মামা। এই সব দৃশ্য় সমাজের মুখ পুড়িয়েছিল। এবার তাতে নবতম সংযোজন বাংলায়।

Next Article