জলপাইগুড়ি: গত কয়েক মাসে এলাকার ভুরি ভুরি চুরির অভিযোগ জমা পড়েছিল থানায়। প্রত্যেকটি অভিযোগের ক্ষেত্রেই একটি সাধারণ বিষয় ছিল। অভিযোগকারীদের বক্তব্য ছিল, যখন চুরির ঘটনা ঘটেছে, তখন নাকি তাঁরা অঘোরে ঘুমিয়েছেন। যখন জেগেছেন, তখনও কেমন একটা আচ্ছন্নের মধ্যে ছিলেন। পুলিশ প্রাথমিকভাবে মনে করেছিল, ঘুম পাড়ানোর ওষুধ দিয়েই চুরি করছে অপরাধীরা। আর এক্ষেত্রে একটি দল ভীষণভাবেই সক্রিয়। এই অভিযোগের তদন্তে নেমে বড় সাফল্য পেল পুলিশ।
ঘটনায় ইতিমধ্যে কিংপিন-সহ মোট দু’জনকে গ্রেফতার করেছে ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ। তাদের কাছ উদ্ধার হয়েছে ঘুম, ডিপ্রেশন জাতীয় ওষুধ এবং কিছু গুড়ো ও কেমিক্যাল জাতীয় জিনিসপত্র।
২০২২ সালের জুন মাসে ময়নাগুড়ি থানার জোড়পাকড়ি এলাকার বাসিন্দা মৃদুল অধিকারীর বাড়ির লোকেরা রাতের খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন অনেক বেলা হয়ে গেলেও ঘুম থেকে না ওঠায় প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। তাঁরা দেখেন, বাড়ির দরজা খোলা রয়েছে। এরপর ঘরে ঢুকে অনেক ডাকাডাকি করেন।
অভিযোগকারীদের বক্তব্য অনুযায়ী, এক সদস্য ঘুম থেকে উঠলেও, তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলেন। ভীষণ অসুস্থ বোধ করছিলেন তিনি। বাড়ির সকলে তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। প্রতিবেশীরাই দেখেন, বাড়ির আলমারি ভাঙা। প্রতিবেশীরাই বাড়ির সদস্যদের হাসপাতালে নিয়ে যান। পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হলে, পরে জানা যায় তাঁদের বাড়ি থেকে নগদ প্রায় ২ লক্ষ টাকা, ল্যাপটপ, সোনার গয়না খোয়া গিয়েছে। তাঁরা সুস্থ হয়ে ময়নাগুড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ। কয়েকদিন আগে নির্দিষ্ট সূত্রের খবরের ভিত্তিতে এলাকার তপন রায় নামে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে আদালতে তুলে হেফাজতে নেয় পুলিশ। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ময়নাগুড়ি দক্ষিণ মৌয়ামারি এলাকার সোনা মহম্মদ নামে এক কবিরাজকে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে ক্লোনাজিপাম জাতীয় ডিপ্রেশনের ওষুধ, ঘুমের ওষুধ -সহ নানা ধরনের ডাস্ট পাউডার উদ্ধার করেছে ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ।
তদন্তে জানা গিয়েছে, এই দলটি একই কায়দায় চুরি করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনা মহম্মদ একজন ওঝা। সে বিভিন্ন বাড়িতে যেত সংসারের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের অছিলায় পরিবারের সদস্যদের হাতে কয়েকটি প্যাকেট দিত। সে বলত, দুপুরের রান্নার সময়ে হলুদ কিংবা নুনের সঙ্গে সেই গুঁড়ো মিশিয়ে পরিবারের সকলকে খাওয়াতে।
ওই মিশ্রণ দিয়ে রাতে রান্নাও করতে বলতেন। যাঁরা সেই ফাঁদে পা দিতেন, তাঁদেরই বিপদ। এরপর ওই ওঝার টিম বাড়িতে নজর রাখত। বাড়ির লোকেরা রান্না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে জানলা কিংবা দড়জা ভেঙে ঘরে ঢুকে চুরি করে পালাত। অথবা এইসব ওষুধ ও অন্যান্য কেমিক্যাল মিশিয়ে স্প্রে করে বাড়ির লোককে অচৈতন্য করে চুরি করত বলে পুলিশ জেরায় জানতে পেরেছে।
ঘটনায় জলপাইগুড়ি পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত জানান, তপন রায়কে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়ে সোনা মহম্মদের নাম জানা যায়। তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এই সোনা মহম্মদই কিং পিন। এই ঘটনায় আর কেউ জড়িত কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।