জলপাইগুড়ি: অবশেষে বানারহাটের দুরামারিতে শুরু হচ্ছে টিকা দেওয়া। গত ৩১ অগস্ট ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পে বিশৃঙ্খলায় পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। টিকা নিতে গিয়ে পদপিষ্ট হন ৩৫ জন। তাঁদের মধ্যে অনেকে মহিলাও ছিলেন। গোটা রাজ্য জুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়। প্রশাসনের তরফে বন্ধ করে দেওয়া হয় ভ্যাক্সিনেশন। ওই এলাকায় এতদিন টিকাপ্রদান বন্ধ ছিল। এতদিন পর মঙ্গলবার থেকে ফের বানারহাটের (Banarhat Vaccination Camp) দুরামারিতে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হচ্ছে।
তবে এবার এক সঙ্গে গোটা গ্রামের বাসিন্দাদের দেওয়া হচ্ছে না। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে এ দিন ২০০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তবে প্রথম দিন শুধু মহিলাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভ্যাকসিনের লাইনে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল বানারহাটের এই ক্যাম্পে। বানারহাটের দুরামারি চন্দ্রকান্ত হাই স্কুলে ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ থাকে চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে। ঘটনাটি ঘটেছিল গত মঙ্গলবার।
সেদিন জলপাইগুড়ি জেলার নতুন ব্লক বানারহাটের শালবাড়ি ১, শালবাড়ি ২ এবং সাকোয়াঝোরা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে টিকা কেন্দ্রের আয়োজন করা হয়। প্রত্যেকটি টিকাকেন্দ্রে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে শালবাড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দুরামারিতে। সব মিলিয়ে প্রবল হুড়োহুড়িতে পদস্পিষ্ট হন মোট ২৯ জন। এঁদের মধ্যে ৮ জন মারাত্মক আহত হন। সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন এক পুলিশ অফিসার।
শালবাড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দুরামারির একটা বাজারের মধ্যে অবস্থিত চন্দ্রকান্ত হাইস্কুল। আগের দিনই ঘোষণা করা হয়, এলাকায় সকাল থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ দুটোই মিলবে। মঙ্গলবার ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই পুরুষ-মহিলারা ভিড় করেন শিবিরে। পাশের বনবস্তি চা- বাগান এলাকা থেকেও দলে দলে মানুষ এসে ভিড় জমাতে শুরু করেন টিকাকেন্দ্রের সামনে। বেলা দশটার মধ্যে হাজার দুয়েক মানুষ স্কুলের গেটের বাইরে পাকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েন টিকার আশায়।
সেদিন অবশ্য স্কুলের গেটের ভেতর হাতে গোনা কয়েকজন পুলিশ কর্মী আর সিভিক ভলান্টিয়ারকে দাঁড় করিয়ে অবস্থার সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এর জেরে তীব্র উত্তেজনা ছড়াতে থাকে। ভোর থেকে চড়া রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে স্কুলের গেট খোলা না পেয়ে মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তার পর বেলা দশটার সময় বানারহাট থানার এএসআই অঞ্জন দে-সহ কয়েকজন এসে স্কুলের গেট খুলতেই হুড়মুড়িয়ে মানুষ ঢুকতে শুরু করেন। বাধা দিতে গেলে পুলিশ কর্মীরা বাধা দিতে গেলে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করে। শুরু হয়ে যায় ধ্বস্তাধস্তি। হুড়মুড়িয়ে ঢুকতে গিয়ে একের পর এক পুরুষ-মহিলা মাটিতে পড়ে যান। অন্যরা তাঁদের মাড়িয়েই টিকা নিতে স্কুলের ভেতরে ছোটেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আহত হন পুলিশ আধিকারিক অঞ্জন কুমার দে নিজেও। এদিকে বেশ কয়েজন মহিলারা তখন শিশু নিয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে আছেন। পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যায়। খবর পেয়ে বানারহাট থানার আরও পুলিশ বাহিনী চলে আসে। ঘটনার শুরু হয় বিতর্কও। পাশের গ্রাম পঞ্চায়েত শালবাড়ি ২-তেও আরেক টিকা শিবিরে ধ্বস্তাধস্তিতে আহত হন অনেকে। সেই ঘটনার রাজ্যে বিতর্ক তৈরি হয়। প্রশাসনও এরপর কড়া পদক্ষেপ করে।