জলপাইগুড়ি: শুক্রবার ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়েছে। বিরোধীদের পরাস্ত করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। গতকালের ফল ঘোষণার পরই আজ ভিডিয়ো বার্তা দিলেন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের সুপ্রিমো জীবন সিংহ। নিজের গোপন ডেরা থেকে ভিডিয়ো বার্তা দিলেন তিনি। কামতাপুর রাজ্যকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে কামতাপুরবাসীকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, কামতাপুরী ভাষা ও আলাদা রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে আগেই সরব হয়েছিলেন কেএলও প্রধান জীবন সিং। তাঁর অভিযোগ, ১৯৪৯ সালের ২৮ অগস্ট স্বাধীন কোচবিহার রাজ্যের সঙ্গে স্বাধীন ভারতের একটি চুক্তি হয়েছিল। যা ‘মার্জার এগ্রিমেন্ট’ নামে পরিচিত। সেই চুক্তি অনুযায়ী, ভারত রাষ্ট্রে কোচ ভূখণ্ডকে আলাদা রাজ্য হিসেবে মান্যতা দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার এতদিন পরেও ভারত সরকার সেই মার্জার চুক্তি কার্যকর করেনি। এ রাজ্যের বিভিন্ন বিজেপি নেতাদের একাংশের গলায় আলাদা রাজ্যভাগের কথা শোনা গেলেও তৃণমূল বরাবরই বিরোধিতা করে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে গতকালের ধূপগুড়ি নির্বাচনের ফলাফলে জীবন সিং-এর আলাদা রাজ্যের স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে কি না তাই এখন প্রশ্নের মুখে।
এ দিনের ভিডিয়ো বার্তায় জীবন সিং অভিযোগ করে বলেছেন, কামতাপুর রাজ্যকে স্বীকৃতি না দেওয়ার ফলে সেখানে বসবাসকারী এলাকার মানুষদের সার্বিক উন্নতি হয়নি। নিজের মাটি-ভাষা ও একাধিক দাবিকে ছিনিয়ে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। এমনকী কামতাপুরী ভাষাভাষির মানুষজনকে একজোট হয়ে আন্দোলনেও নামার আর্জি জানিয়েছেন জঙ্গি সংগঠনের সুপ্রিমো।
মূলত কামতাপুরীদের দুটি দাবি ছিল। আলাদা ভাষা ও আলাদা রাজ্য। এর মধ্যে ভাষার স্বীকৃতি আগেই দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি স্কুলও রয়েছে কামতাপুরীদের জন্য। শুধু তাই নয়, তৃণমূলের সদ্য় জয়ী বিধায়ক ডক্টর নির্মল চন্দ্র রায়ের কামতাপুর ভাষা নিয়ে লেখা একাধিক বইও রয়েছে। ফলে, আলাদা রাজ্যের সমর্থন কি তৃণমূলের নির্মল চন্দ্র রায়ের কাছ থেকে পাবেন জীবন সিং? তার উত্তর ভবিষ্যৎই দেবে।
সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য বলেন, “কালকের ফল ঘোষণা আর জীবনের ভিডিয়ো বার্তার সঙ্গে লুকনো সম্পর্ক রয়েছে কি না তা সময়ই বলবে। তবে বিভাজনের রাজনীতি এরা আগেও করেছে। ভবিষ্যতেও করবে। তাই মানুষের উচিত সতর্ক হওয়া।” সদ্য জয়ী তৃণমূল বিধায়ক নির্মল চন্দ্র রায় বলেন, “উনি রাজ্যভাগ নিয়ে খেলছেন না। যা প্রয়োজন স্পষ্টভাবে বলছেন। ইতিহাসের গবেষক হিসাবে আমার মনে হয়েছে, ওঁর এই দাবিকে অনেকেই সমর্থন করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার ধূপগুড়ি নির্বাচনের সময় তো বলতে পারত রাজ্যভাগের কথা। ওরা শুধু ললিপপ দেখাচ্ছে।”