ধূপগুড়ি : আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুর। কখনও ছুটে আসছে ছাগল। তাড়িয়েও দিচ্ছেন শিক্ষকরা। কিন্তু, ফের খাবারের টানে ফিরে আসছে কুকুর-ছাগলের দল। এই অবস্থাতেই খোলা আকাশের নিচে বসে মিড-ডে মিলের খাবার খাচ্ছে পড়ুয়ার দল। মাথার উপর শেড তো দূর একটা ত্রিপল পর্যন্ত নেই। রীতিমতো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার খাচ্ছেন পড়ুয়ারা। এমনই ছবি ধরা পড়ল ডুয়ার্সের ধূপগুড়ি ব্লকের অন্তর্গত বারোঘড়িয়া ১ নম্বর বোর্ড ফ্রি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মিড ডে মিলের (Mid-Day Meal) পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে কিছুদিন আগে রাজ্যে এসেছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। তাঁদের আসার খবর আসতেই প্রতিটি স্কুলে কড়া নির্দেশিকা পাঠানো হয় রাজ্য সরকারের তরফে। তারপরেই প্রায় সব স্কুলের বিভিন্ন পরিকাঠামোগত দিক, রান্নার জায়গা সমস্ত কিছু ত্রুটিহীনভাবে সাজিয়ে তোলার কাজ নতুন উদ্যোমে শুরু হয়। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের দলের সামনে যাতে কোনও সমস্যায় না পড়তে হয় সে কারণেই জোরকদমে শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি।
অভিযোগ, রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ঘুরে যেতেই তার কিছুদিনের মধ্যে আগের অবস্থা ফিরে এসেছে স্কুলগুলিতে। বেহাল অবস্থা মিড-ডে মিলের। খোলা আকাশের নিচে মিড ডে মিল খেতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। নেই কোনও খাবারের উপযুক্ত জায়গা। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, খাবার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকার কারণেই খোলা আকাশের নিচে গাছের তলায় খেতে হচ্ছে খাবার। কখনও আবার পড়ে থাকা খাবারের থালা থেকে খাবার খেয়ে যাচ্ছে পথ কুকুর। কখনও মুখ দিচ্ছে ছাগল। এমনই ছবি ধরা পড়ল ক্যামেরায়। যদিও এই পরিস্থিতির জন্য উপর মহলের দিকেই দায় ঠেলছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন স্কুলের শিক্ষকরা। খাচ্ছে বাচ্চারা। কুকুর-ছাগল এলে মাঝে মাঝে তাড়িয়েও দিচ্ছেন তাঁরা। এ ছবি সামনে আসতেই বাড়তে শুরু করেছে উদ্বেগ। রাজনৈতিক মহলে বাড়ছে চাপানউতর। পড়ুয়া থেকে অভিভাবক সকলে বলছেন, এই অবস্থায় খাবার পরিবেশন চলতে থাকলে যে কোনও সময় খেতে হতে পারে কুকুরের কামড়। এমনকী ধুলো-বালিও উড়ে এসে পড়ছে খাবারে। হতে পারে পেট খারাপও। এমনকী যে কোনও সময় পাখির বিষ্ঠা পড়তে পারে খাবারে। অভিযোগ, স্কুল পরিদর্শক থেকে উপরমহলের আধিকারিকরাও জানেন সবই। কিন্তু তারপরেও কোনও সুরাহা হয়নি।
ঘটনায় বিজেপির ধূপগুড়ি টাউন মন্ডল কনভেনার চন্দন দত্ত বলেন, “কেন্দ্রীয় টিমের আইওয়াশ করার জন্য কিছুদিন স্কুলগুলোতে ঠিকঠাক পরিষেবা চলছিল। কেন্দ্রের টিম চলে যাওয়ার পর আবার আগের মতো অবস্থা হয়েছে স্কুলগুলির। যেখানে রাজ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে টাকা নষ্ট করছে সেখানে স্কুলের পরিচালন সমিতি সামন্য শেড দেওয়া ঘর তৈরি করতে পারছে না। কারণ শেড তৈরির টাকা মন্ত্রীদের পকেটে চলে গিয়েছে। আগামীদিনে আরও খারাপ অবস্থা হবে।” বারোঘড়িয়া ১নং বোর্ড ফ্রি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃদুল রায় বলেন, “আমরা বহুদিন ধরে শেড ঘরের জন্য উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু, কোনও সুরাহা হয়নি। তাই কোনও উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে এভাবে খোলা আকাশের নিচে বাচ্চাদের মিড-ডে মিল খাওয়াচ্ছি।”