জলপাইগুড়ি: বিজেপি-র নির্বাচিত প্রতিনিধিকে অপরহরণের অভিযোগ উঠল খোদ দলেরই নেতাদের বিরুদ্ধে। নেতৃত্বের এহেন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে বোর্ড গঠনের সভা কার্যত বয়কট করলেন ওই গ্রামপঞ্চায়েতের বিজেপির বাকি নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। ফাঁকতালে গ্রামপঞ্চায়েত দখল করে আবির খেলল তৃণমূল। নজিরবিহীন এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জলপাইগুড়ি রাজনৈতিক মহলে।
জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের মাধব ডাঙা ২ নং গ্রামপঞ্চায়েত। সেখানে ১৬ আসন বিশিষ্ট এই গ্রামপঞ্চায়েতে বিজেপি জিতেছিল ৮ টি আসনে। তৃণমূল ৭ পেয়েছিল আসন। ১ টি আসনে জিতেছিলো নির্দল প্রার্থী। ভোটের ফল বের হওয়ার পর নির্দল প্রার্থী তৃণমূল যোগ দেন। ফলে তৃণমূলের পক্ষেও দাঁড়ায় ৮ জন সদস্য।
সূত্রের খবর, নেতৃত্বের নির্দেশ অনুযায়ী বিজেপির ৮ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি গত কয়েকদিন ধরে এক গোপন আস্তানায় একসঙ্গেই ছিলেন। অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে ময়নাগুড়ি বিধানসভার বিজেপির কো কনভেনর নিতাই রায় এক প্রতিনিধি গোপাল সরকারকে আরও বেশি নিরপত্তা দেওয়ার অছিলায় তাঁকে বাইকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে জানা যায় সেই প্রার্থীকে অপহরণ করা হয়েছে। আর এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই তুমুল অশান্তি শুরু হয় বিজেপির কর্মীদের মধ্যে। অপহরণের অভিযোগ তুলে রাতেই ময়নাগুড়ি থানার লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
বুধবার সকাল পর্যন্ত নিখোঁজ হওয়া প্রার্থীকে খুঁজে না পাওয়ায় খবর নিতে যান ময়নাগুড়ি দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতি অজিত কুমার রায়। তাঁকে দেখতে পেয়ে তার বিরুদ্ধেও নিতাই রায়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন বিজেপির বেশ কিছু উত্তেজিত কর্মীরা। এরপর তাঁরা চড়াও হয়ে অজিত রায়কে মারধোর করে বলে অভিযোগ। ঘটনার খবর পেয়ে পৌঁছায় ময়নাগুড়ি থানার বিরাট পুলিশ বাহিনী। তাঁরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এই ঘটনায় বিজেপির মহিলা মোর্চার সভাপতি তথা বিজেপির নব নির্বাচিত পঞ্চায়েত লিপি নন্দ সরকার বলেন, “আমরাই বোর্ড গঠন করব সমস্তটা ঠিক হয়েছিল। কিন্তু গতকাল রাতে আমাদের বিজেপির নেতা নিতাই রায় এক পঞ্চায়েতকে আরও বেশি নিরাপত্তা দেওয়ার নাম করে নিয়ে যান। এর কিছুক্ষC পর তিনি ফোন করে জানান গোপাল সরকারকে রাস্তা থেকে অপহরণ করা হয়েছে। আসলে এখানে একটা ষড়যন্ত্র। যাতে আমরা বোর্ড গঠন করতে না পারি সেই কারণেই এই ঘটনা। এর পিছনে আমাদের কিছু নেতাও জড়িত রয়েছেন। আমরাও এর শেষ দেখে ছাড়ব। প্রয়োজনে আদালতে যাব।”
বিজেপির দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতি অজিত কুমার রায় বলেন, “আমাদের এখানে দু’টি গোষ্ঠী আছে। আমার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকরাই আমাকে মেরেছে। আমি এই সমস্ত কিছু জানি না। আমার বিরোধী গোষ্ঠী চক্রান্ত করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”
সবুজ রায় নামে এক বিজেপি কর্মী বলেন, “মানুষ তৃণমূলের অত্যাচার সইতে না পেরে আমাদের ৮ জন প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করেছিল। কিন্তু আমাদের নেতারা নিজেরাই গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব করে আমাদের এক সদস্যকে ৪৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিল। অর্থের লোভেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।”
বিজেপি নেতা নিতাই রায় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। অভিযুক্ত বিজেপি নেতা বলেন, “আমি একজন বিজেপির কর্মী হয়ে এই ধরনের কাজ কেন করব। আমার যদি অন্য কোনও ব্যাপার থাকতো তাহলে আমি তৃণমূল কংগ্রেস দলই করতাম। আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন আমাদের দলেরই কিছু নেতা।”
ঘটনায় বিজেপির জেলা সভাপতি বাপী গোস্বামী জানিয়েছেন, “ময়নাগুড়ি মাধব ডাঙা ২ নং গ্রামপঞ্চায়েতে কী হয়েছে তা জানা নেই। বোর্ড গঠনে কেনো আমাদের নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা গেলেন না সেই নিয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।”