ধূপগুড়ি: দুর্গাপুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসার সময়ই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কমিটিগুলির কাছে অনুরোধ করেছিলেন নিরাপত্তার স্বার্থে যেন আগাম পুজোর থিম জানিয়ে রাখেন তাঁরা। এরপর এই মর্মে একটি নির্দেশিকাও জারি করে কলকাতা পুলিশ। তবে আরজি করের ঘটনার আবহের মধ্যেই হঠাৎ জেলা পুলিশের নির্দেশিকায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে একাংশ পুজো কমিটির সদস্যদের মধ্যে। তাঁদের বক্তব্য, কোনও পুজো কমিটি যাতে আরজি কর ইস্যুকে হাতিয়ার করে থিম না বানায় বা প্রতিমা সজ্জায় তুলে ধরতে না পারে সেই কারণেই এই ধরনের গাইডলাইন তৈরি হয়েছে।
চার পাতায় ছাপা গাইডলাইনের প্রথম পাতায় জেলা পুলিশের তরফে পুজো কমিটি গুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়ছে, ‘এ বছরের মণ্ডপ ও মূর্তির ভাবনা আগাম কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। আলোচনা সাপেক্ষে ভাবনা পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে হবে।” ইতিমধ্যেই এনিয়ে জেলা জুড়ে পুজো আয়োজকদের তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে ৷ আয়োজকদের বড়ো অংশই মনে করছেন কোনও পুজো কমিটি যেন আরজি কর কাণ্ডের মতো বিষয় পুজো মণ্ডপ এবং প্রতিমায় তুলে ধরতে না পারে, তাই আগে থেকেই বাতিল করার ভাবনা রেখেছে পুলিশ। সেই কারণেই থিম নিয়ে এই ‘অতি সক্রিয়তা’ এবং ‘অগ্রিম সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে।
যদিও, এই যুক্তি মানতে নারাজ পুলিশ কর্তারা৷ জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার খন্ডবাহালে উমেশ গণপত। এই নির্দেশিকায় আরজি কর ইস্যু বা এমন কোনও বিতর্কিত বিষয়ের যোগ নেই বলেই জানিয়েছেন। জেলার শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকের কথায়, এটা শুধুমাত্র পুজো প্যান্ডেল ও শোভাযাত্রার নিরাপত্তা সংক্রান্ত অগ্রিম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করাতে প্রয়াস মাত্র।
তবে নিছক নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থার সাথে পুজোর বিশেষ করে প্রতিমার থিমের কী যোগ? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আয়োজকরা। জেলার অন্যতম বড়ো পুজো আয়োজক ধূপগুড়ি মিলন সংঘ ক্লাবের সহ সম্পাদক সুব্রত নন্দী বলেন,”আমাদের থিম বহু আগেই ঘোষিত। কোনও পরিস্থিতেই সেটা পরিবর্তন করা সম্ভব না। এর আগে কখনো পুলিশ প্রশাসনের তরফে এই ধরনের শর্তাবলী দেওয়া হয়নি । এবার প্রথম এই ধরনের শর্তাবলী দেওয়া হয়েছে। আমাদের মনে হচ্ছে সদ্য বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গিয়েছে। যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে দেশজুড়ে। সেই কারণে সতর্কতা নিচ্ছে সরকার পুলিশ প্রশাসন।” ধূপগুড়ির দক্ষিণায়ণ ক্লাবের সহ সভাপতি সুবোধ দাসের বক্তব্য,”আমাদের মনে হয় আরজি করের ঘটনা থেকেই প্রশাসন সর্তকতা অবলম্বন করেছে। যাতে পুজোকে কেন্দ্র করে কেউ সেই ঘটনাকে থিম বা প্রতিমা তৈরি করতে না পারে। তাই এই শর্তাবলী দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন আগে থেকে জানতে চাইছে সরকার বিরোধী বা আরজি কর-কে থিম হচ্ছে কি না। প্রয়োজনে পরিবর্তন হতে পারে।
বস্তুত,জলপাইগুড়ি জেলায় এবার সব মিলে পুজোর সংখ্যা হাজারের বেশি। যার মধ্যে নথিভুক্ত তথা লাইসেন্স প্রাপ্ত আটশোর বেশি পুজো।