শিলিগুড়ি: দ্বিতীয় দফায় রবিবার থেকে বাংলায় ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ শুরু করলেন রাহুল গান্ধী। এই যাত্রা-য় এখনও পর্যন্ত ইন্ডিয়া জোট শরিক তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি। তবে এদিন যাত্রার শেষে বাংলার মানুষের উপরই ভারতকে একসূত্রে বাঁধার দায়িত্ব দিলেন রাহুল গান্ধী। একইসঙ্গে বাংলার মানুষ যে ভালবাসা দিয়েছে, তা অন্য কোনও প্রদেশ দেয়নি বলেও উল্লেখ করেন রাগা। যা বর্তমানে কংগ্রেস-তৃণমূল দ্বৈরথের মধ্যে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাহলে কি প্রকারান্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ‘ইন্ডিয়া’ জোট নিয়ে বার্তা দিলেন রাহুল গান্ধী? এমন প্রশ্নও উঠছে।
এদিন কোচবিহার থেকে জলপাইগুড়ি হয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছয় রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’। তিন জেলাতেই রাহুলের যাত্রাপথে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন ও উচ্ছ্বাস দেখা যায়। বাংলার শাসকদল এদিন রাহুলের যাত্রা-য় সামিল না হলেও শিলিগুড়িতে সিপিআইএম কর্মী-সমর্থক লাল পতাকা হাতে ন্যায় যাত্রা-য় সামিল হয়েছেন। এছাড়া জলপাইগুড়িতে হামারো পার্টির প্রধান অজয় এডওয়ার্ডসও রাহুলের যাত্রা-য় সামিল হন এবং ইগো ভুলে সমস্ত দলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তারপর শিলিগুড়িতে এদিনের যাত্রা শেষে বাংলার মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভারত জোড়ার যাত্রার দায়িত্ব দিলেন রাগা।
বাংলার মানুষের উচ্ছ্বাস-উন্মাদনায় অভিভূত রাহুল বলেন, “বাংলা যে ভালবাসা দিয়েছে, অন্য কোনও প্রদেশ হয়তো দেয়নি। সকলকে ধন্যবাদ।” এরপরই ঘৃণা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান রাহুল গান্ধী। এপ্রসঙ্গে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উদাহরণও তুলে ধরেন। বাঙালিকে ‘বুদ্ধিমান’ উল্লেখ করে রাহুল গান্ধী বলেন, “ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলা ও বাঙালি প্রথম এগিয়ে এসেছিল। আপনারা বুদ্ধিমান, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আপনারা একসঙ্গে লড়াই করেছেন। এবার আপনাদের দায়িত্ব, দেশকে রাস্তা দেখানো।” এপ্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, স্বামী বিবেকানন্দের কথা তুলে ধরে রাহুল গান্ধী বলেন, “আপনাদের মনের ভিতরে আগুন রয়েছে। এই আগুন সবার মনে রয়েছে, ছোট বাচ্চাদের মনেও রয়েছে। ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এগিয়ে আসুন, আপনাদের বুদ্ধি দিয়ে ভারতকে জোড়ার কাজ করুন। তবে একজনের পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব হবে না।” বাংলার সকল মানুষকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, “এটা একজনের কাজ নয়। আপনারা একসঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করে দেখান। আপনারা রাস্তা না দেখালে দেশ ক্ষমা করবে না।”
বর্তমানে ভারতে ঘৃণা, হিংসার বাতাবরণ চলছে, যুবরা কাজ পাচ্ছে না বলেও ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা থেকে সরব হন রাহুল গান্ধী। একইসঙ্গে কেন্দ্রের অগ্নিবীর প্রকল্পেরও তীব্র সমালোচনা করেন। ঘৃণা-হিংসার বাতাবরণ বদলে সকলকে ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করাই তাঁর ভারত জোড়ো যাত্রার লক্ষ্য বলে জানালেন রাহুল গান্ধী। তাঁর কথায়, “দূর থেকে নয়, মঞ্চ থেকে নয়, স্ক্রিন থেকে নয়, হাঁটতে হাঁটতে আপনাদের কথা শুনতে চাই।”