ময়নাগুড়ি: পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণার পরও রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের অভ্যন্তরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অব্যাহত রয়েছে। আদি ও নব্য তৃণমূলের দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে এ জলপাইগুডড়ি জেলায়। যোগ্য সম্মান না পাওয়ার অভিযোগ তুলে শতাধিক অনুগামী নিয়ে দল ছাড়লেন ময়নাগুড়ির আদি তৃণমূল নেতা। দল ছেড়েই ক্যামেরার সামনে ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। তৃণমূলত্যাগী নেতা রবিন ঘোষ সাফ জানিয়েছেন, দলে যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন না। সে জন্যই দল ছাড়লেন। সেই সঙ্গে তাঁর অভিমান, রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সালে দল যখন প্রার্থী পায়নি তখন তিনিই ময়নাগুড়ির দোমহনী এলাকার থেকে তৃণমূলের টিকিটে লড়েছিলেন এবং জিতেওছিলেন। কিন্তু বর্তমান নেতৃত্বের অবহেলার কারণেই দল ছাড়লেন বলে দাবি তাঁর।
২০২২ সালের ১২ জুলাই। ময়নাগুড়ি হয়ে ধূপগুড়িতে জনসভা করতে যাচ্ছিলেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কনভয় যখন দোমহনী দিয়ে যাচ্ছিল সেই সময় কনভয় দাঁড় করিয়ে দোমহনী হাটের বেহাল দশার কথা তুলে ধরেছিলেন স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি রবিন ঘোষ। রবিন বাবুর সঙ্গে কথা বলার পর অভিষেক গাড়ি থেকে নেমে হাটের বেহাল দশা পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি সেখান থেকে সভাধিপতি উত্তরা বর্মনকে ফোন করে দোমহনী হাটের শেড নির্মান করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মতো খুব তাড়াতাড়ি হাটের শেড তৈরি হয়েছিল। সেই নেতাই দলে সম্মান না পাওয়ার অভিযোগ সরব হলেন দল ছাড়লেন। রবিবার হোয়াটস অ্যাপে পদত্যাগ পত্র বর্তমান ব্লক সভাপতির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন রবিন। তাঁর পদত্যাগ পত্র প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেছেন বর্তমান ব্লক সভাপতি মনোজ রায়।
দলত্যাগের প্রসঙ্গে রবিন ঘোষ বলেন, “যখন দলে লোক ছিল না তখন আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে ছিলাম। দল ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সালে যখন এই দোমহনী অঞ্চল থেকে তৃণমূল প্রার্থী পাচ্ছিল না, তখন আমি দাঁড়িয়ে এই এলাকা থেকে জিতেছি। আমরাই এই এলাকায় সিপিএমের সঙ্গে লড়াই করেছি। দলের মিছিলে লোক পাঠানো থেকে শুরু করে যে কোনও বিপদে আমরা পাশে ছিলাম। কিন্তু বর্তমান ব্লক সভাপতি আমাদের পাত্তা দেন না। আমার সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত রাখেন না। তাই আজ অভিমানে আমরা দল ছাড়লাম। আমার পদত্যাগ পত্র বর্তমান ব্লক সভাপতির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।” রবিন ঘোষের অনুগামী পদ্ম পাল বলেছেন, “আমরাই এই এলাকার আদি তৃণমূল কর্মী। অথচ আমরাই এখন দলে সম্মান পাই না। আমরা সবাই মিলে আজ তৃণমূল থেকে পদত্যাগ করলাম। আমাদের দল ছাড়ার খবর পেয়ে বিজেপি সহ অন্যান্যরা দল আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কিন্তু আমরা অন্য কোনও দলে যাব কি না তা এখনও ঠিক করিনি।”
এ বিষয়ে তৃণমূলের ময়নাগুড়ি ১ নম্বর ব্লক সভাপতি তথা ময়নাগুড়ি পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান মনোজ রায় বলেন, “উনি পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছেন। আমি পেয়েছি। তবে উনার অভিযোগ সঠিক নয়। কারণ ময়নাগুড়ি ব্লকে হাজার হাজার মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র কয়েকজনকে নিয়ে অঞ্চল কমিটি। তাতে উনি রয়েছেন। তার মানে দল উনাকে যোগ্য সম্মান দিয়ে একটা চেয়ার দিয়েছে। এবার উনার কাজ সেই আসনকে অলঙ্কৃত করা। যাই হোক আমি উনার সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করব।”