জলপাইগুড়ি : করোনা কালে টোটো (Toto) অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে রাজ্যে হইচই ফেলে দিয়েছিল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গ্রিন জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri)। এবার তাঁরা বানিয়ে ফেলল শববাহী টোটো। টোটোকে শববাহী গাড়িতে রুপান্তর করে তাক লাগিয়ে দিলেন অঙ্কুর দাস। পেট্রোলের বদলে সৌরবিদ্য়ুৎ চালিত এই শববহনকারী গাড়ি এবার গরিব মানুষকে আরও বেশি করে বিনামূল্যে পরিষেবা দেবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার কর্তারা।
সম্প্রতি, জলপাইগুড়ির শবদেহ কাণ্ড সামনে আসার পর রাজ্যজুড়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। অর্থাভাবে মায়ের মৃতদেহ শববাহী গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ ছিল না। তাই মায়ের দেহ কাঁধে তুলে শ্মশানের পথে হাঁটা দিয়েছিলেন দিনমজুর ছেলে। জলপাইগুড়িতে এমন মর্মান্তিক ছবি প্রকাশ্যে আসতেই তা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়ে যায়। মৃতদেহ সৎকারের জন্য এগিয়ে আসে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সাহায্য করা হয় শববাহী গাড়ি দিয়ে। তবে, এই ঘটনা সাজানো বলে অভিযোগ ওঠে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিরুদ্ধে। গ্রেফতার করা হয় ওই সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অঙ্কুর দাসকে। অঙ্কুর দাসের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল অ্যাম্বুলেন্স চালক অ্যাসোসিয়েশন। যদিও বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত। এই ঘটনায় বিস্তর জল ঘোলা হলেও, প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সমান্তরাল লড়াই চালিয়ে অঙ্কুর দাস বিনামূল্যে শব বহন পরিষেবা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
কিন্তু, বর্তমানে পেট্রোলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে বিনামূল্যে এই পরিষেবা দেওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। কী করবে শব বহনের কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছিল সংস্থার কর্মীদের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে নতুন বুদ্ধি আসে সংস্থার সম্পাদক অঙ্কুর দাসের মাথায়। যদি একটি টোটো রিক্সোকে শববাহী গাড়ির আদলে বানিয়ে নিয়ে তাতে সোলার সিস্টেম লাগিয়ে দেওয়া যায় তবে আর লাগবে পেট্রোল খরচ। বিনামূল্যে চালানো যাবে শব বহনের কাজ। চালু থাকবে পরিষেবা। সেই ভাবনা থেকেই শুরু কাজ।
শববাহী টোটো তৈরির জন্য বাজেট দাঁড়ায় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। তাঁদের অল্প কিছু আর্থিক সাহায্য করতে এগিয়ে আসে এলাকারই এক পরিবার। এরপর ওই পরিবার এবং গ্রিন জলপাইগুড়ি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে মাত্র সাত দিনে তৈরি হল শববহনকারী টোটো। কাজ শুরুর আগে মঙ্গলবার দেওয়া হল পুজো।
এ প্রসঙ্গে, গ্রিন জলপাইগুড়ি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক অঙ্কুর দাস বলেন, “জলপাইগুড়ি শহরে শববাহী গাড়ির সংখ্যা খুব কম। এক অসাধু চক্র অ্যাম্বুলেন্সে শব বহন করে থাকে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সমস্যা হল কোনও দেহ যদি একদিনের বেশি হয়ে যায় তখন সেই মৃতদেহের জীবানু ওই অ্যাম্বুলেন্সে থাকে। ফলে ওই গাড়িতে যাতায়াতের সময় অন্যান্য রোগী বা তার আত্মীয়রা ওই জীবানু থেকে সংক্রমিত হতে পারেন। পাশাপাশি যেই ভাবে পেট্রোল সহ গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে চলেছে তাতে আমাদের পক্ষে ওই পেট্রোল চালিত শববাহী গাড়ির পরিষেবা দেওয়া মুশকিল হচ্ছিল। ফলে আমরা সৌর চালিত শববাহী টোটো পরিষেবা শুরু করলাম। এখন পেট্রোল বা ইলেকট্রিক চার্জিং খরচ লাগবে না। যার জেরে এখন থেকে আমাদের পক্ষে বিনামূল্যে এই পরিষেবা দেওয়াটা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।”