জলপাইগুড়ি: রাজ্যের হাসপাতালে কেউ মারা গেলে সেই দেহ নিখরচায় বাড়ি পৌঁছে দিক সরকার। এই আবেদন জানিয়ে জেলাশাসকের দফতরে হাজির হলেন প্রয়াত লক্ষ্মীরাণী দেওয়ানের স্বামী জয়কৃষ্ণ দেওয়ান। জয়কৃষ্ণবাবু তাঁর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সেই আবেদনপত্র তুলে দিয়েছেন জেলাশাসকের হাতে। জয়কৃষ্ণবাবুর বক্তব্য, আর কারও যেন তাঁর মতো পরিস্থিতি না হয়। আর কাউকে যেন দালালদের দাপটের কারণে প্রিয়জনের দেহ কাঁধে নিয়ে বাড়ি ফিরতে না হয়। সোমবার দুপুরেই জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের দফতরে যান ক্রান্তি ব্লকের জয়কৃষ্ণ দেওয়ান। জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেদিন কী ঘটেছিল? কেন লক্ষ্মী দেওয়ানের দেহ কাঁধে নিয়ে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে, তাঁর ছেলেকে? জেলাশাসকের দফতরে দাঁড়িয়ে জয়কৃষ্ণবাবু বলেন, “অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য ৩ হাজার টাকা চেয়েছিল সেদিন। আমার অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে আনতে এত খরচ হয়নি, দেহ নিয়ে যেতে যা টাকা চাইল। ওয়ার্ড মাস্টারের কাছেও গিয়েছিলাম আমি। বলেছিলাম, স্যর ওরা আমার কাছে ৩ হাজার টাকা চাইছে। আপনি কোনও ব্যবস্থা করে দিন। উনি বলছেন, এরকম কোনও ব্যবস্থা নেই। আজ জেলাশাসক বলছেন ‘আমার কাছে আসতে পারতেন, সুপারিনটেনডেন্টের কাছে যেতে পারতেন’। আমাকে তো সেদিন ওয়ার্ড মাস্টার বলেননি। বললে তো আমি যেতাম। ”
জয়কৃষ্ণবাবুর চিঠি পেয়েছেন বলে জানান জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। এই আবেদনপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি। অ্যাম্বুল্যান্সের ইচ্ছামতো দর হাঁকার বিষয়টিও যে তাঁদের নজরে সে কথা জানিয়ে জেলাশাসক বলেন, “একটা বৈঠক ডাকা হয়েছে। আরটিও, পুলিশ, অ্যাম্বুল্যান্স অ্যাসোসিয়েশনের সকলে থাকবেন। কিলোমিটারের হিসাবে একটা রেট চার্ট যাতে নির্দিষ্ট করা যায়, দেখা হচ্ছে।”
একইসঙ্গে জেলাশাসক জানান, ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে। জেলা প্রশাসনও রেট চার্টের বিষয়টি দেখছে। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধীনে থাকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে শববাহী গাড়ি ৩ হাজার টাকা ভাড়া চাওয়ায় স্ত্রীর মৃতদেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন জয়কৃষ্ণ দেওয়ান ও তাঁর ছেলে। এই ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। কেন এমন অমানবিক ঘটনা ঘটল তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বিভিন্ন মহলে।