ধূপগুড়ি ও ময়নাগুড়ি: এ রাজ্যে তেমন কাজ জুটছিল না। তিন সন্তানের পড়াশোনার খরচ তো দূরের কথা, তাদের পেট চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছিল। তাই ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন ধূপগুড়ির গণেশচন্দ্র রায়। নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে কথাও হত তাঁর। সোমবার রাতে ফোনে কথা হওয়ার ১২ ঘণ্টা পরই যে এমন একটা খবর আসবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি গণেশের স্ত্রী। মহারাষ্ট্রের নাগপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে কাজ করার সময় গার্ডার লঞ্চার ভেঙে মৃত্যু হয়েছে এ রাজ্যের চার শ্রমিকের। তার মধ্যে রয়েছেন ধূপগুড়ির দুই বাসিন্দা গণেশচন্দ্র রায় ও প্রদীপ রায়। এছাড়া ময়নাগুড়ির চারের বাড়ি এলাকার দুই শ্রমিক সুব্রত সরকার ও বলবার সরকারেরও মৃত্যু হয়েছে। নাগপুরে ওই ঘটনায় মোট ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। গার্ডার লঞ্চারের নীচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের।
ধূপগুড়ির পশ্চিম ডাউকিমারি এবং উত্তর কাঠালিয়া গ্রামের বাসিন্দা গণেশ ও প্রদীপ। মঙ্গলবার সকালে মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই গ্রামে নেমেছে শোকের ছায়া। গণেশের মা এবং স্ত্রী বারবার কান্নায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছেন। পরিবারে রয়েছেন তাঁর এক পুত্র সন্তান ও দুই কন্যা সন্তান। বাড়ির একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য ছিলেন গণেশ।
পেটের তাগিদে বছর খানেক আগে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। নাগপুরের একটি নির্মাণ সংস্থার হয়ে কাজ করছিলেন তিনি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৮ দিন পরেই বাড়ি ফেরার কথা ছিল গণেশের। মৃতের স্ত্রী প্রতিমা রায় জানান, রাতে শেষবার তাঁর সঙ্গে তাঁর স্বামীর কথা হয়েছিল। গণেশ জানিয়েছিলেন, ২৮ দিন পর বাড়ি ফিরবেন, তারপর আর বাইরে কাজে যাবেন না। এরপর খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। সকালে দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায়। তার কিছুক্ষণ পরই এক প্রতিবেশী এসে গণেশের মৃত্যুর খবর জানান। তিন সন্তানকে নিয়ে কী করবেন, সেটা বুঝতে পারছেন না প্রতিমা। মৃতের দিদি জানিয়েছেন, এ রাজ্যে কাজে তেমন ভাল আয় হয় না, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ উঠবে কী করে! তাই বাড়তি আয়ের আশাতেই ভিনরাজ্যে যেতে হয়েছিল তাঁর ভাইকে।
অন্যদিকে, ময়নাগুড়ির দুই শ্রমিকের সঙ্গেও রাত থেকে কোনও যোগাযোগ করা যাচ্ছি না। পরে মঙ্গলবার দুপুরে মৃত্যুর খবর পৌঁছয় বাড়িতে। জলপাইগুড়ি জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানিয়েছেন, জেলার বাসিন্দা মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ময়নাগুড়ির বাসিন্দা দুই শ্রমিকের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে ধূপগুড়ির যুবকদের দেহ এখনও ময়নাতদন্ত হয়নি। জেলা প্রশাসনের তরফে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।