দুর্যোগ-দুর্ভোগের অন্ত নেই। দুদিনের টানা বৃষ্টিতে মেদিনীপুর আদ্রা রেল ডিভিশনের শালবনির গোদাপিয়াশাল ও গোবরুর মাঝে রেল লাইনে ধস দেখা দিয়েছে। খড়্গপুরে রেল এলাকাতেই পাঁচটি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। কোথাও রাস্তা ভেসেছে জলে। কোথাও বা জলের তোড়েই ভেসে গিয়েছে চারচাকা। বানভাসি অবস্থা উপকূলেও। উত্তরবঙ্গে, ছাপিয়ে উঠেছে করলা নদী। প্লাবিত জলপাইগুড়ির ওয়ার্ডের পর ওয়ার্ড। নদীয়ার শান্তিপুরে জলের মধ্যেই ঘর করছেন গ্রামবাসী। অভিযোগ, পঞ্চায়েত প্রধান বিজেপি বলে শাসক শিবির জলনিকাশে কোনও সাহায্য় করছে না।
নিম্নচাপের পিছনেই আরও একটি নিম্নচাপের আশঙ্কা। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শুক্রবারে বাংলা লাগোয়া বঙ্গোপসাগরের উপর একটি ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হতে পারে। সেটিও নিম্নচাপে ঘনীভূত হবে, এমনই সম্ভাবনা দেখছেন আলিপুরের আবহবিদরা। আজও দিনভর ভাসবে কলকাতা। পূর্বাভাস আলিপুর আবাহাওয়া দফতরের (Weather Live Update)। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বজ্রবিদ্যুত্-সহ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
দেখুন ভাদ্র ধারাপাতের সব আপডেট একনজরে…
পূর্ব মেদিনীপুর: নতুন করে ভারি বৃষ্টি না হলেও জমা জলেই পটাশপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করেছে। টানা বৃষ্টির কারণে বাগুই কেলেঘাই-সহ একাধিক নদীতে জলস্ফীতি। গ্রামের মধ্যে হু হু করে ঢুকছে জল। রাস্তাঘাট পুকুর-মাঠ মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। মধুপুর, নৈপুর-সহ বিভিন্ন গ্রামে বন্যার জল ঢুকতে শুরু করেছে। জলমগ্ন ২৫টির বেশি গ্রাম। টানা বৃষ্টিতে জলভাসি কাঁথি রামনগর, খেজুরি, এগরার বিস্তীর্ণ এলাকা। কাঁথির মকুমাশাসক আদিত্য বিক্রম মোহন হিরানি বন্যা পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে বলেন, “বৃষ্টি কমে যাওয়ায় নতুন করে আর পরিস্থিতির অবনতি হয়নি । বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনও ক্ষয়ক্ষতির তেমন খবর আসেনি । তবে মাটির বাড়িগুলির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে । ব্লকপ্রশাসনকে দুর্গত মানুষদের ত্রিপল ও শুকনো খাবার দেওয়ার জন্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
নদিয়া: জলযন্ত্রণাতেও রাজনীতির রঙ! বাড়ি ডুবেছে জলে। কিন্তু বিজেপি করার ‘অপরাধে’ তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। বারবার পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয়েও পরিস্থিতির কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। জলের তলায় যেতে বসেছে ঘর বাড়ি। নদিয়ার শান্তিপুরের বাবলা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। যদিও, তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান উন্নতি সর্দার এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি, কোনও রাজনৈতিক রঙ দেখে কাজ করা হয় না। অতিদ্রুত যাতে সমস্যার সমাধান করা যায় সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
শহরের জল কমতেই ফুলে ফেঁপে উঠেছে করলা নদী। মঙ্গলবার রাতেই ফের প্লাবিত জলপাইগুড়ির পরেশ মিত্র কলোনি। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ এলাকাাবাসীর। ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা মমতা রায় বলেন, “এই অসহায় পরিস্থিতি এখন আমাদের গায়ে সয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি হলেই ঘরে জল ঢোকে। ঘর ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করছি।” জলপাইগুড়ি পৌরসভার চেয়ারপার্সন পাপিয়া পাল জানিয়েছেন, পুরসভার পক্ষ থেকে এলাকায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দ্রুত করা হবে। বুধবার সকাল থেকেই শহরের সব কয়টি ওয়ার্ড জলমগ্ন ছিল।
শিলাবতী নদীর জল স্তর বাড়তেই চন্দ্রকোনা দু’নম্বর ব্লকের ভগবন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েত কোশাডাল গ্রামে শিলাবতী নদী বাঁধে দেখা দিল ধস। ধস মেরামত করতে তৎপর গ্রামের বাসিন্দারা। ৫-৬ টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা, তাই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় গ্রামবাসীরা বাঁশ ও থলিতে মাটি ভরে বাঁধ মেরামত করতে ব্যস্ত।
রেল লাইন জলমগ্ন হয়ে যাওয়ায় বাতিল করতে হল একাধিক ট্রেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বেশ কিছু লাইনে জল জমেছে। রেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে খড়গপুর শাখার হিজলি স্টেশনের কাছে রেল লাইনে জমেছে জল। তার জেরেই ট্রেন চলাচল ব্যহত হয়েছে। বেশ কিছু ট্রেনের সময় পরিবর্তন করতে হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জল যদি নেমে যায়, তাহলেই ফের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হুগলির তারকেশ্বর পৌর সভার ১৪, ৯, ৫ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ড। এমনকি বহু বাড়িতেও ড্রেনের জল উপচে ঢুকেছে। আরামবাগ শহরের জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত। টানা বৃষ্টির জলে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। শহরের ৩, ১৪,১৩, ১৮ ,১৯ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
আজও দিনভর ভাসবে কলকাতা। পূর্বাভাস আলিপুর আবাহাওয়া দফতরের। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বজ্রবিদ্যুত্-সহ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। নিম্নচাপের বৃষ্টি আজ, বুধবার দিনভর চলবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। কলকাতায় প্রধানত মেঘলা আকাশ এবং বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। বৃষ্টি হবে হাওড়া, হুগলি মুর্শিদাবাদ, বর্ধমানে।
বৃষ্টির কমলা সর্তকতা রয়েছে তিন জেলায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুরে বৃষ্টি হতে পারে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত। ১০০ মিলি মিটার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া ও পুরুলিয়া জেলায়। ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে। ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে কলকাতা হাওড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে।
টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত কলকাতা। বিধান নগর পৌরনিগম এলাকায় নিকাশি নালার অবস্থা খারাপ। বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বিধান নগর পুরো নিগমের ২০ নম্বর ওয়ার্ড জগত্পুর, সন্তোষপল্লি, আদর্শ পল্লি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের পান চাষের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলার সাগর, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমার অন্যতম অর্থকরী ফসল পান। প্রায় পনেরো হাজারের বেশী পানের বরোজ আছে কাকদ্বীপ মহকুমা এলাকায়। টানা ভারী বৃষ্টিতে প্রতিটি পানের বরোজ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পান চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।
দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে মেদিনীপুর আদ্রা রেল ডিভিশনের শালবনির গোদাপিয়াশাল ও গোবরুর মাঝে রেল লাইনে ধ্বস। ঘটনাস্থলে রেলের আধিকারিকরা, আপাতত ট্রেন চলাচল বন্ধ এই লাইনে।
টানা বৃষ্টির ফলে পানিহাটি পৌরসভা বিস্তীর্ণ অঞ্চল। কোথাও হাঁটু সমান, কোথাওবা কোমর সমান! বিধ্বস্ত এলাকাবাসীরা। বাইক নিয়ে একাধিক ব্যক্তি জলে পড়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে জলবাহিত রোগের সংক্রমণের আশঙ্কায় স্থানীয় বাসিন্দারা।
লাগাতার বৃষ্টির জেরে খড়্গপুর রেল এলাকা জলে ভেঙে গেল পাঁচটি বাড়ি। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর একুশ নম্বর ওয়ার্ডের কুলি বস্তিতে। দিশেহারা বাসিন্দারা।