মালদা: বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে একটা পুকুর। সেই পুকুরে সোমবার সাতসকালে যখন তল্লাশি চালাচ্ছিলেন দুঁদে পুলিশ কর্তারা, তখনও ঘুণাক্ষরে বিপদ আঁচ করতে পারেননি গ্রামবাসীরা। কিন্তু কোণে দাঁড়িয়ে দর দর করে ঘেমে চলেছেন বাড়ির একাধিক সদস্য। বাড়ির কর্তা তখন নির্বিকার। পুকুরে জাল ফেলতেই উঠে আসতে থাকে একের পর এক সরঞ্জাম। কী সেগুলো? বড় বড় মেশিন, যা দেখে রীতিমতো ভিড়মি খাওয়ার জোগাড় পড়শিদের। পরে বুঝলেই পুকুরের মধ্যেই কিনা এই কাণ্ড! বাড়িতে তৈরি হত আগ্নেয়াস্ত্র। আর সেই অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম লুকিয়ে রাখা হত পুকুরে। মালদার কালিয়াচকে এক ব্যক্তির বাড়িতে অস্ত্র কারখানার হদিশ মিলল। পুলিশ আনারুল শেখ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র মজুত ও পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
সোমবার সকালে মালদার কালিয়াচকের বীরনগর গ্রামের নতুন বেগুনটোলা এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানার হদিশ মিলেছে। এদিন পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালায়। মূলত গত ৯ মে কালিয়াচক থানার পুলিশ স্থানীয় যুবক আনারুল শেখকে গ্রেফতার করে। তাঁর কাছ থেকে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার হয়। আনারুলের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র মজুত ও পাচারের অভিযোগ ছিল। আনারুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই ওই পুকুরের খোঁজ পান তদন্তকারীরা।
আদালতের মাধ্যমে পুলিশ আনারুলকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। এরপর নতুন করে তদন্ত শুরু হয়। আর তারপরেই দেখা যায় আনারুল তাঁর বাড়িতে অস্ত্রের কারখানাও চালাতেন। নিজের বাড়ি লাগোয়া পুকুরে সেই সব জিনিসপত্র এবং অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন, যাতে কোনরকম সন্দেহের অবকাশ না থাকে। আজ পুলিশ অভিযান চালিয়ে সেই সব অস্ত্র উদ্ধার শুরু করেছে।
তদন্তকারীরা মনে করছেন, আনারুল বড় চক্রের সঙ্গে জড়িত। কোথায় কোথায় কাকে আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করতেন আনারুল, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। আনারুল আন্তঃরাজ্য পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত বলেই তদন্তকারীরা নিশ্চিত। অনেকগুলি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এলাকার পুকুরের মধ্যে যে অস্ত্র রয়েছে, তা জেনেই এখন হতভম্ভ প্রতিবেশীরা। তাঁদের এক জনের বক্তব্য, “এমনও ঘটছে এলাকায়, আমরা তো পাশেই থাকি! ভাবতেও ভয় লাগছে। জানি না কোন চক্রের সঙ্গে জড়িত। দেখে তো বোঝাই যায়নি আগে।”