মালদহ: খোলা ম্যানহোলে পড়ে যুবকের মৃত্যু ঘিরে শনিবার দিনভর চলেছে তরজা। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, কলকাতার রাস্তায় কেন ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা পড়ে থাকল? পাল্টা শাসকদলের তরফে দাবি করা হয়েছে, স্থানীয় বস্তিবাসী ওই ম্যানহোলকে শৌচাগার হিসাবে ব্যবহার করতেন। তার জেরেই বিপত্তি। রবিবারও মালদহে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সে কথাই বললেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। ফিরহাদের দাবি, স্থানীয়দের অবিমৃষ্যকারিতাই এই ঘটনার জন্য দায়ী।
রবিবার মালদহের চাঁচলের কলিগ্রামে দু’টি বাসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গিয়ে পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “কলকাতায় বেশির ভাগ ম্যানহোলই ঢাকা থাকে। এই যে ম্যানহোলটায় ঘটনা ঘটেছে, সেখানে পাশেই কিন্তু ম্যানহোলের মুখটা রাখা। ঢাকনাটা একেবারে তুলে উল্টো করে রাখা। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন কিন্তু নয়। ওখানে একটা বস্তি রয়েছে। সেখানকার কিছু মানুষ বাচ্চাদের ওখানে বসিয়ে বাথরুম করান। সুবিধার জন্য ওটা তুলে রাখেন। আমি আগে জানলে বস্তিতে একটা বা দু’টো বাথরুমও বানিয়ে দিতে পারতাম। যদি জায়গা থাকত। কিন্তু এটা আমার দুর্ভাগ্য যে নজরে আসেনি। কেউ আমাকে বলেওনি। এটা আমরা ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে বলেছি জায়গা চিহ্নিত করতে। যদি ম্যানহোলের ঢাকনা তুলে বাথরুম করতে হয়, এটা অত্যন্ত লজ্জার। বাচ্চাদের নাকি ওই ঢাকনা সরিয়ে কিছুটা দূরে বসিয়ে বাথরুম করানো হয়। আমরা বলেছি, বস্তির ভিতরে জায়গা চিহ্নিত করে দিতে, আমরা কিছু বাথরুম বানিয়ে দিতে চাই। কর্পোরেশন করে দেবে। ওখানকার লোকজন ওই ঢাকটানা তুলে রেখে একটা বিপদ তৈরি করেছিল। অনেকেই হয় বাড়ির সামনে বাচ্চাকে বাথরুম করাবে!”
একইসঙ্গে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “পুলিশকে বলেছি, বিষয়টা দেখতে। বিশ্বাস করবেন না আপনারা ওই গর্তটা চার ফুটের মতো বড় জোর গভীর হবে। সেখানে পড়ে যে কেউ মারা যাবে ভাবতেও পারছি না। ভদ্রলোকের কোনও অসুস্থতা ছিল কি না, কিংবা অস্বাভাবিক কিছু ব্যাপার ছিল কি না পুলিশকে বলেছি নির্ধারণ করার জন্য।”
যদিও ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্যের পাল্টা বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “যদি ম্যানহোল খোলা থাকে দেখার দায়িত্ব কার? প্রশাসক নামে পদ করেছে। এটা অমানবিক সরকার। তাই মানুষ ন্যূনতম পরিষেবাটুকুও পাচ্ছে না।”
শনিবার সকালে খোলা ম্যানহোলের মধ্যে পড়ে মৃত্যু হয় দমদমের বেদিয়াপাড়ার বাসিন্দা, পেশায় অটোচালক রঞ্জন সাহার। পরিবারের মূল রোজগেরে বলতে রঞ্জনই ছিলেন। দক্ষিণ দমদম পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড বেদিয়াপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। শনিবার পুরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডে সেভেন ট্যাঙ্কের কাছে ম্যানহোল খোলা থাকায়, তাতে উপুড় হয়ে পড়ে যান তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর পুষ্পালি সিনহার সাফাই ছিল, বস্তিবাসী ওই ম্যানহোল শৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করত। রঞ্জন সাহার মেজ ভাইয়ের বৌ অচলা সাহা দত্ত অবশ্য এই ধরনের দাবি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, যদি তেমনই হয়, তাহলে কেন শৌচাগার বানিয়ে দিলেন না?
আরও পড়ুন: Tenure of ED and CBI Chief: ইডি-সিবিআই অধিকর্তাদের কার্যকালের মেয়াদ ৩ বছর বাড়াল কেন্দ্র