বাঁকুড়া: নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন হাসপাতালের কর্মী। আর তাঁকে জাগাতে কাল-ঘাম ছুটল রেল দুর্ঘটনায় আহতদের পরিজনদের। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের ঘটনা। সেখানে ভাইরাল চিকিৎসা পরিষেবার ঢিলেঢালা ছবি। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় এহেন ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তেই তুঙ্গে চাপানউতর। যদিও, ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি টিভি৯ বাংলা।
বালেশ্বরে রেল দুর্ঘটনার পর বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ জুড়ে জারি করা হয়েছিল চুড়ান্ত সতর্কতা। কিন্তু হাসপাতালের সেই সতর্কতা যে ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’ তার আবার প্রমাণ মিলল। আর তার জেরে আহতের এক্স-রে করাতে গিয়ে ঘুমন্ত কর্মীকে জাগাতে রীতিমত নাকাল হতে হল আহতর পরিবারকে। ৩ জুন ভোরের সেই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই তৈরি হয় চাঞ্চল্য। ইতিমধ্যেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই কর্মীকে শোকজ করা হয়েছে। শরীর অসুস্থ থাকাতেই এই ঘটনা ঘটেছে দাবি অভিযুক্ত কর্মীর।
২ জুন বালেশ্বরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ওই ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হন বাঁকুড়া জেলার ৬৬ জন যাত্রী। ৩ জুন থেকে আহতরা ফিরতে শুরু করেন বাঁকুড়া জেলায়। আহতদের একাংশকে ভর্তি করা হয় বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে। দুর্ঘটনায় আহতরা চিকিৎসার জন্য বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে আসতে পারে সেই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই মেডিক্যাল কলেজ জুড়ে জারি করা হয় চূড়ান্ত সতর্কতা।
হাসপাতালের সমস্ত বিভাগকে সতর্ক করার পাশাপাশি চিকিৎসক,চিকিৎসা কর্মী,অন্যান্য কর্মীদের তৈরি থাকার কথা জানানো হয়। মজুত রাখা হয় সমস্ত গ্রুপের রক্ত ও প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। কিন্তু এতসব প্রস্তুতি সত্ত্বেও আহত ট্রেন যাত্রীর চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে ওঠে গুরুতর অভিযোগ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভাইরাল ভিডিয়োয় দেখা যায়, আহত এক ট্রেন যাত্রী এক্স-রে জন্য কাউন্টারে হাজির হন। তিনি দেখেন কাউন্টারে কোনও কর্মী নেই। কাউন্টারের জানালা দিয়ে তিনি তাকিয়ে দেখেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী ভিতর একটি বেঞ্চে আরামে শুয়ে নাক ডাকছেন। কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর আহতর আত্মীয় তাঁকে ঘুম থেকে জাগাতে সমর্থ হলেও ওই কর্মী বেঞ্চ ছেড়ে আর ওঠেননি। সেখানে শুয়ে শুয়েই আহতর আত্মীয়র কাছ থেকে নথি নিচ্ছেন। গোটা বিষয়টি নিজের মোবাইলে ভিডিয়ো করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন আহতর ওই আত্মীয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতালের ডিজিট্যাল এক্স-রে ব্যবস্থা পিপিপি মডেলে চালায় একটি বেসরকারি সংস্থা। তা সত্ত্বেও বিষয়টি জানাজানির পর ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত কর্মীর দাবি, ঘটনার দিন তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন। তাই বিভাগের ভিতরে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁর বিশ্রামের জন্য আহতর চিকিৎসা পরিষেবায় কোনও বিঘ্ন ঘটেনি। আহতর ডিজিট্যাল এক্স-রেও যথাসময়ে হয়েছে।
এরপরও প্রশ্ন উঠছে, যেখানে হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা ডিজিট্যাল এক্স-রে চালু থাকার কথা এবং যেখানে রেল দুর্ঘটনার জেরে হাসপাতাল জুড়ে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা ছিল সেখানে এমন গাফিলাতি হল কীভাবে?