মালদা: রহস্যের পর রহস্য মালদাকাণ্ডে। তদন্তে নেমে একের পর এক পর্দাফাঁস করতে তৎপর গোয়েন্দারা। নিজের মা-বাবা-ঠাকুমা-বোনকে খুন করে বাড়ির গুদামে মাটির মধ্যে পুঁতে রাখে ১৮ বছরের আসিফ মহম্মদ। শুক্রবার, আসিফের দাদা আরিফের অভিযোগের ভিত্তিতে রাত দুটোয় আসিফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তে নেমে বাড়ির চারদিকে সিসিক্যামেরা থেকে গোপন সুড়ঙ্গ এমনকী ৫টি সেভেন এমএম পিস্তল ও ১০টি ম্যাগাজিন এবং ৮৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। রবিবার, মালদার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনীল সরকার সাংবাদিক বৈঠকে মালদা কাণ্ডের তদন্তপর্ব তুলে ধরেন।
যে নয়টি প্রশ্ন পুলিশকে ভাবাচ্ছে
১. কেন চারমাস পর আরিফ পুলিশের দ্বারস্থ হয়? কেন আগে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেনি আরিফ? কেন চারমাস পরেই মুখ খুলল সে?
২. মহম্মদ আসিফ কি একাই খুন করেছিল নাকি বন্ধুদেরও সাহায্য নিয়েছিল ?
৩. স্কুল ব্যাগে অস্ত্রশস্ত্র রেখেছিল আসিফ। কে তাকে অস্ত্রের জোগান দিয়েছিল? কেনই বা বন্ধুদের কাছে অস্ত্র রাখতে দিয়েছিল আসিফ?
৪. সন্দেহজনক আচরণ আসিফের বন্ধু সাবির আলির মা পলি বিবির। ছেলেকে বাঁচাতে পুলিশের দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করছেন না তো তিনি?
৫. ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে কি অপরাধচক্রে যোগ আসিফের? কীভাবে পরিকল্পনা করেছিল আসিফ?
৬. বাড়ির চারদিকে কেন এত সিসিক্য়ামেরা বসানো হয়েছিল?
৭. আসিফ ও তার বন্ধুদের সঙ্গে ব্যাঙ্গালোরের কী যোগ?
৮. আসিফ কি কারোর প্ররোচনায় এই খুন করেছে?
৯. কোনওভাবে আসিফের বাড়ির লোক কি গোপনতথ্য জানতে পেরেছিলেন? সেই জন্য় মরিয়া হয়ে কি পরিবারকে খুন করে সে?
রবিবার, সাংবাদিক বৈঠকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনীল সরকার জানান, এখনও পর্যন্ত আসিফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি, অস্ত্র উদ্ধার কাণ্ডে আসিফের দুই বন্ধু সাবির আলি ও মহফুজ খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে খুন এবং অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাকে একসঙ্গে দেখতে নারাজ তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, দুটি সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনা। খুন করার অভিযোগেই আসিফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, খুন করার পরেই বাড়িতে সিসিক্যামেরা লাগায় আসিফ। তার উপর কেউ নজর রাখছে কি না তা দেখার জন্য়ই ওই ক্যামেরা গুলি ইনস্টল করা হয়।
পাশাপাশি, তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, একাধিক ইলেকট্রনিক গ্যাজেটস উদ্ধার হয়েছে আসিফের কাছ থেকে। সেইসব কিছুই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আসিফের আচরণ সন্দেহজনক বলে আগেই জানিয়েছিলেন স্থানীয়রা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কথায়, “আসিফের বডি ল্যাঙ্গোয়েজ ভাব ভঙ্গির মধ্যে একটা অস্বাস্থ্যের চিহ্ন রয়েছে। আমরা ওকে ডেকে কথা বলেছিলাম স্থানীয়দের অনুমানের ভিত্তিতে। তাতে ওর কথা কিছুটা সন্দেহজনক মনে হলেও তথ্য প্রমাণ না থাকায় ওকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে আমরা নজর রেখেছিলাম।”
তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন, আরিফের বক্তব্যে এখনও অসঙ্গতি বিশেষ পাওয়া যায়নি। খুনের দিন অর্থাৎ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, আসিফ যখন পরিবারের সকলকে খুন করতে যায়, তখন আরিফের সঙ্গে তার হাতাহাতি হয়। আরিফের হাত মুখ টেপ দিয়ে বাঁধা হয়েছিল। পানীয়ে মাদক মিশিয়ে অচৈতন্য সকলকে জলে চুবিয়ে রেখেছিল আসিফ। আরিফ জ্ঞান ফিরে পেতেই আসিফের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। প্রাণ বাঁচিয়ে পালায় আরিফ। আরিফের যে মামা মাঝে এসেছিলেন তিনি ঝাড়খণ্ডে থাকেন। পরিবারের সদস্য হিসেবেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তবে খুনের সঙ্গে আসিফের বন্ধুদের সরাসরি কোনও যোগাযোগ নেই। আসিফের বয়ান মোতাবেকই অস্ত্র উদ্ধার করা হয় তার বন্ধু সাবির ও মহফুজের থেকে।
আসিফের বাড়ির চারদিকে লাগানো হয়েছিল সিসিক্যামেরা। সাংবাদিক বৈঠকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, প্রাথমিক তদন্তের পর তাঁদের অনুমান, খুন করার পরেই আসিফ সিসিক্য়ামেরা গুলি লাগিয়েছিল। তার উপর কেউ নজর রাখছে কি না বা আশেপাশের মানুষের গতিবিধির উপর নজর রাখতেই বসানো হয় ক্যামেরাগুলি। তবে, ক্যামেরার ফরেন্সিক রিপোর্ট এখনও আসেনি। তাই কবে থেকে লাগানো হয়েছিল বা কী কারণ ছিল তা স্পষ্ট নয়।
আসিফের সঙ্গে সাইবার জালিয়াতির কোনও চক্র আছে কি না বা তাকে কেউ নির্দেশ দিত কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও, গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এমন কোনও তথ্য় সামনে আসেনি যেখান থেকে জানা যাবে সে আসিফ কারো দ্বারা পরিচালিত হবে। তবে সবটাই তদন্তসাপেক্ষ বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অনীল সরকারের কথায়, “এই কেসে একমাত্র সন্দেহভাজন আসিফ মহম্মদ নিজে। আপাতত, সেই দিকেই লক্ষ্য রাখছি আমরা।” আসিফকে ১২ দিনের জন্য এবং সাবির ও মহফুজকে ৫ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: Malda Murder: নমাজে অনীহা ছিল আসিফের, বাড়ি থেকে উদ্ধার ৫টি সেভেন এমএম পিস্তল ও ১০টি কার্তুজ!