মালদহ: সামনে বয়ে যাচ্ছে নদী, আর অদূরেই পাড়ে বসে পড়ছে খুদেরা! কি, দৃশ্যটা দেখে সেই রবি ঠাকুরের গল্পের পাঠশালার মতো মনে হল না? কিন্তু বাস্তবে চিত্রটা একই হলেও, পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। গঙ্গা গিলে খাচ্ছে বিঘার পর বিঘা জমি। আর গিলতে গিলতে কাছে চলে এসেছে স্কুলের। আর মাত্র ২৫ মিটার বাকি। ইচ্ছা হলেই যে কোনও মুহূর্তে গঙ্গা গিলে খেতে পারে, একটা আস্ত গোটা স্কুলকে। পাড়ের ধারে রীতিমতো ঝুলছে সেই স্কুলের প্রাঙ্গন। পড়ুয়ার সংখ্যা কমে অর্ধেক। শিক্ষকরা আসেন, কারণ কিছু অভিভাবক এখনও সাহস করে সন্তানদের পাঠাচ্ছেন স্কুলে, আর বাকিরা ঘরে! ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মালদহের গোপালপুর অঞ্চলের হুকুমতটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
গ্রামের একটিমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়। গঙ্গার অতলে তলিয়ে যেতে বসেছে সেটাই। মানিকচকের গোপালপুর অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গঙ্গা ভাঙ্গন অব্যাহত। বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও স্থায়ী ভাঙ্গন রোধের কাজের কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ।
গঙ্গার ভাঙনে নিয়মিত তলিয়ে যাচ্ছে জমি, বাড়ি, গোটা গ্রাম। এখন গোপালপুর অঞ্চলের প্রাথমিক স্কুল তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। স্কুল থেকে আর মাত্র ২৫ মিটার দূর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে গঙ্গা। স্কুলের দালান ভেঙে চলে গিয়েছে নদীগর্ভে। তাই অভিভাবকদের আশঙ্কা, যদি স্কুলে পাঠান সন্তানকে, আর ভাঙন গ্রাস করে, তাহলে! স্কুলের ছাত্র সংখ্যা ১৫১। কিন্তু স্কুলে যায় তার অর্ধেক। শিক্ষকরা নিয়মিত আসছেন। কিন্তু আতঙ্কিত তাঁরাও।
এক অভিভাবক বলেন, “নদী একেবারে কাছে এসে গিয়েছে, কী স্কুলে পাঠাব, কখন ডুবে যায়। স্কুলটাকে সরিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যাক। তাহলে আমাদের ছেলেমেয়েরা যাবে।” আরেক অভিভাবকের বক্তব্য, ”
বাচ্চারা যায়, নদীর ধারে যাচ্ছে, জল খেতে, মাস্টারমশাই তো ১৫০ ছাত্রকে একা সামলাতে পারবেন না। তাই আর অভিভাবকরা ভয়ে স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। যখন হাওয়া উঠবে, তখন ২৫ মিনিটও লাগবে না, সব ডুবতে।”
স্কুলের পরিচালন কমিটির সদস্যের বক্তব্য, “ছাত্র আমাদের অর্ধেক আসছে। ১৫১ ছাত্রের মধ্যে ৮০-৯০ জন আসছে। ভয়ে অভিভাবকরা পাঠাচ্ছেন না। গঙ্গা অনেক কাছে চলে এসেছে। যে কোনও সময়েই ডুবে যেতে পারে। যে কোনও সময়েই আমাদের স্কুল গঙ্গাগর্ভে চলে যেতে পারে।” স্কুলে বাঁধের ওপাশে সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন সকলেই।