Kali Puja 2021: বলি দেখলে ছটফট করেন স্বয়ং দেবী! নামতে চান নাকি বেদি থেকে…

TV9 Bangla Digital | Edited By: অবন্তিকা প্রামাণিক

Oct 31, 2021 | 8:53 AM

Malda: মা যাতে বলি না দেখতে পান সেই জন্য কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় তাঁকে।

Kali Puja 2021: বলি দেখলে ছটফট করেন স্বয়ং দেবী! নামতে চান নাকি বেদি থেকে...
ডাকাতদের পুজো করা মানিকোড়া কালী প্রতিমা (নিজস্ব ছবি)

Follow Us

মালদা: বলির সময় নাকি কালী প্রতিমার পা নড়ে ওঠে। বেদি থেকে নামতে চান তিনি। আর সেই কারণেই বলির সময় মায়ের পায়ে শেকল পড়িয়ে রাখা হত। পুনর্ভবা নদীর ধারে ঘন জঙ্গলের মধ্যে এভাবেই পুজো করত ডাকাত দল। কথিত আছে এক সময় নাকি নরবলিও হত এখানে। তবে এখনের পরিস্থিতি কী?এখনও কি রয়েছে বলি প্রথা? কোথায় হতো এই পুজো? একবার দেখে নেওয়া যাক পুরো ইতিহাস।

ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রাম মানিকোড়া। বহুবছর ধরে এই রীতিতেই কালী পুজো হয়ে আসছে সেখানে। আজও বলি হয়। তবে পশু বলি। প্রায় হাজার খানেক ছাগবলি পড়ে এখানে। এখন আর মায়ের পা শেকল দিয়ে বাঁধা হয় না। তবে এখানকার জনগণ বিশ্বাস করেন, বলির সময় মা যাতে বিচলিত না হয়ে পড়েন সেই কারণে তাঁর মুখ ঢেকে দেওয়া হয়। বলি না দেখলে বেদি ছেড়ে নামার চেষ্টা করেবেন না তিনি,আর এই বিশ্বাসে ঢেকে দেওয়া হয় তাঁর মুখ।

শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দুরে হবিবপুর থানার জাজৈল অঞ্চলে ‘মানিকোড়া গ্রামের এই কালি পুজোকে ঘিরে বহু অলৌকিক কাহিনী রয়েছে । সেই কাহিনী থেকে ওই এলাকার কালী’ মায়ের নামকরণ হয়েছে মানিকোড়া কালী ।

তৈরি হচ্ছে প্রতিমা

শোনা যায়,সেই সময় একদল ডাকাত জঙ্গলে ভরা এই মানিকোড়ায় পূর্নভবা নদী পেরিয়ে এসে রাতভর মায়ের পুজোতে মেতে থাকত । আর সূর্যোদয়ের আগেই এলাকা ছেড়ে আবার চলে যেত জঙ্গলে। শুধু এই কাহিনি নয় আরও অনেক গল্প জরিয়ে আছে মানিকোড়ার এই মা কালীকে নিয়ে।

বলা হয়, যেহেতু চুপিচুপি গোপনে ডাকাতরা পুজো করতো, সেইজন্য নিঃশব্দে হতো এই পুজো। তাই এই কালী মা নাকি কোনওরকম আওয়াজ শুনতে পছন্দও করতেন না। এমনকী পুজোর পরে বলি দিত ডাকাতেরা। সেই সময় মা নড়ে উঠত। তাই মাকে পায়ে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। আজও পাঁঠা বলির সময় সেই রীতি মেনে মায়ের পায়ে শিকল দেওয়া না হলেও মা যাতে বলি না দেখতে পায় সেই জন্য কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।

ধীরে ধীরে জনবসতি বাড়তে থাকায় ডাকাতরা পুজো থেকে সরতে থাকে। ঠিক সেইসময় পুরো পুজোর দায়িত্ব নিয়ে নেয় এলাকার জমিদার ভৌরবেন্দ্র নারায়ণ রায়। শেষ পর্যন্ত জমিদারি চলে যেতে থাকায় গত ১০০ বছর আগে পুজোর দায়িত্ব জমিদাররা তুলে দেন গ্রামবাসীদের হাতেই।

আজও ধুমধামের সঙ্গে এই কালী পুজো করে আসছে মানিকোড়া গ্রামের গ্রামবাসীরা। এই কালী পুজোকে ঘিরে হবিবপুর সহ মালদায় বেশ সাড়া পড়ে। কালী পুজোতে ভক্তদের ঢল নামে। সাতদিন ধরে বসে এখানে বসে মেলা।

কথিত আছে, এই গ্রামে এক শাঁখারি আসে শাঁখা বিক্রি করতে। সেই সময় এক মহিলা এসে তাঁর কাছে শাঁখা পড়তে চায়। শাঁখা পড়ার পর শাঁখারি টাকা চাইলে ওই মহিলা বলে, ‘টাকা তার বাবা দেবে’। শাঁখারি তার বাবাকে জানতে চাইলে ওই মহিলা সেবাইত এর নাম বলে। এরপর সেবাইত সেখানে উপস্থিত হলে শাখারি তাঁর কাছে টাকা চান। তিনি আশ্চর্য হয়ে বলেন, তাঁর কোনও মেয়ে নেই। আর ঠিক সেই সময়ই তিনি দেখতে পান পুকুরে শাঁখা পড়া দুই হাত উঠে আছে। তখনই তিনি বুঝতে পারেন যে, স্বয়ং মা কালী তাঁর মেয়ে সেজে এসে শাঁখা পড়ে গিয়েছে। তাঁর পরই শাঁখারিকে শাঁখার দাম দিয়ে দেন ওই সেবাইত।

এছাড়া আরও এক কাহিনি সকলের মুখে মুখে ঘোরে তা হল, এই গ্রামে বেশ কিছু পরিবার এসে বসবাস শুরু করে। তাঁরা চিড়ে তৈরি করে বিক্রি করত। মা কালী রাতে আওয়াজ করা পছন্দ করেন না। কিন্তু ওই গ্রামবাসীরা চিড়ে বানাতো রাতে। এবং তার জন্য আওয়াজ হত। কথিত আছে মা বেশ কয়েকবার স্বপ্নও দেন ওই চিড়ে বিক্রেতাদের। কিন্তু তবুও তারা না শোনায় গ্রামে কলেরা রোগ দেখা দেয়। বেশ কিছু লোক মারাও যায়। এরপর তারা রাতে চিড়ে তৈরি করা বন্ধ করে দেন।

এই পুজোয় ভক্তদের সমস্ত আর্জি মা মিটিয়ে দেন বলেই দাবি এলাকাবাসিদের। আজও নিষ্ঠার সঙ্গে মানিকোড়া মায়ের পুজোর হয়ে আসছে মহা ধুমধামে ।

আরও পড়ুন: Kali Puja 2021: এই ৩ গ্রামে হয়না কোনও কালীপুজো, জানুন ডাকাত কালীর ইতিহাস

Next Article