মালদা: মালদায় প্রথম রাজ্য প্রাণীর খোঁজ পাওয়া গেল। তবে বাঘরোলের (Fishing Cat) খোঁজ যে এইভাবে পেতে হবে তা হয়ত আশা করেনি বনদফতর এবং বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করে চলা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি। একটি বাঘরোলকে মেরে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার অপরাধে গ্রেফতার এক যুবক।
কী ঘটেছে?
গত ২১ অক্টোবর মালদার যুবক অজিত হেমব্রম নামে এক যুবক সামাজিক মাধ্যমে (Social Media) একটি ছবি পোস্ট করেন। ওই ছবিতে দেখা যায় একটি মৃত রাজ্য প্রাণী অর্থাৎ বাঘরোলের পিঠের চামড়া ধরে দাঁড়িয়ে আছেন অজিত। তার মুখ রক্তাক্ত। সোশ্যাল মিডিয়া সেই ছবি দেখার পর তোলপাড় পড়ে যায় বন্যপ্রাণ ও পরিবেশ সংগঠনগুলির মধ্যে। ওই যুবকের খোঁজে শুরু হয় সাইবার তল্লাশী।
এরপর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বনদফতরকে অভিযোগ জানানো হয়।বনদপ্তর অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে অজিতকে। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায় বাঘরোল হত্যা করার বাঁশের অস্ত্রশস্ত্র। এই কাজে অজিতের সঙ্গে ছিলেন তাঁর কাকা। তাঁর খোঁজেও রয়েছে বনদফতর। এরপর টিভি নাইন বাংলার তরফে মালদার ডিএফও বি সিদ্ধার্থের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মালদা জেলায় এই প্রথম খোঁজ পাওয়া গেল রাজ্য প্রাণীর। তবে অভিজ্ঞতাটা আমাদের জন্য ভাল নয়। অভিযুক্ত অজিত হেমব্রমকে আটক করা হয়েছে ২৪ অক্টোবর তাঁকে তোলা হচ্ছে মালদা জেলা আদালতে। অপর অভিযুক্ত অজিত হেমব্রমের কাকার খোঁজে মালদা পুলিশ ও বনদফতর।”
উল্লেখ্য, আইইউসিএন লাল তালিকা অন্তর্ভুক্ত বাঘরোল বা ফিশিং ক্যাট পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য প্রাণী। গত ২০ জানুয়ারি, ২০২২ হাওড়ার বাগনানে তিনটি রাজ্য প্রাণীকে হত্যা করেন দুজন মৎস্য চাষী। কিন্তু ওই দুই অভিযুক্ত পলাতক। বন্যপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক ক্ষমতা খাটিয়ে পলাতক বাগনানের বাঘরোলের হত্যাকারী ওই দুই অভিযুক্ত। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে মালদার এই ঘটনা রাজ্যের বন্যপ্রাণের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য প্রাণী ওড়িশার চিলকা হ্রদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর সেখানে গণনা হয়েছে বাঘরোলের। ২০২৩ এর জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে পশ্চিমবাংলায় বাঘরোলের সেনসাস । এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে বাঘরোল হত্যার এই ঘটনা সম্পর্কে জানাচ্ছেন দ্য ফিশিং ক্যাট প্রজেক্টের তিয়াসা আঢ্য। তিনি বলছেন, “সংগঠন হিলের কিছু সদস্য ওই যুবকের খোঁজ চালানোর জন্য তাকে ফোন করে। তাদের পাতা ফাঁদে পা দেয় অভিযুক্ত যুবক। তারপর বনদপ্তর আটক করে ওই যুবককে।” তিয়াসা জানাচ্ছেন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষগুলোকে সঙ্গে নিতে পারলে তবে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া যাবে।
রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল, ওয়াইল্ডলাইফ দেবল রায় বলেন, “সিডিউল১ তালিকাভুক্ত প্রাণী বাঘরোল হত্যার দায়ে ন্যূনতম তিন থেকে সাত বছর সাজা হতে পারে অপরাধীর। সঙ্গে ১০ হাজার টাকা বা তার বেশি জরিমানা। অপরাধীকে সাজা দেওয়ার ব্যাপারে কোনভাবেই আপোষ করা হবে না।”