মালদা : অপহৃত হয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী। অপহরণের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলেরই বিরুদ্ধে। ১১ দিন পর অপহৃত ওই তৃণমূল কর্মীর মুণ্ডহীন দেহ (TMC worker murdered) মিলল বাড়ি থেকে ৫০০ মিটার দূরে মাখনা চাষের বিলে। অভিযুক্ত এক তৃণমূল নেতা সহ চার তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মৃত তৃণমূল কর্মীর নাম আব্দুল বারিক। তাঁর মাথা পাওয়া যায়নি। সেই মাথার খোঁজ করছে পুলিশ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হরিশ্চন্দ্রপুরের কাতলামারি গ্রামে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্ব লেগেই রয়েছে। এই এলাকার দুই নেতা আব্দুল বাসির ও উনসা হকের গোষ্ঠীর মধ্যে মাঝেমধ্যেই গোলমাল বাধে। গত ছয়মাস আগেও পরস্পরের মধ্যে গোলাগুলি চলেছিল। অভিযোগ, গত ১৪ মে উনসা হক গোষ্ঠীর তৃণমূল কর্মী আব্দুল বারিককে বাড়ি থেকে মুখে কাপড় বেঁধে তুলে নিয়ে যায় আব্দুল বাসিরের লোকজন। আব্দুল বারিক সম্পর্কে উনসা হকের ভাইপো। অপহরণে বাধা দেওয়ায় বারিকের স্ত্রী সায়েমা বিবিকে মারধর করা হয়। আব্দুল বাসির-সহ ১৫ জন তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সায়েমা বিবি। এরপরই বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে পালান আব্দুল বাসির-সহ অভিযুক্তরা।
অপহরণের অভিযোগ পাওয়ার পরই তদন্তে নামে পুলিশ। গতকাল গ্রেফতার করা হয় আব্দুল বাসিরকে। নেপালে পালানোর সময় সীমান্ত থেকে তাঁকে পাকড়াও করে পুলিশ। আজ সকালে তাঁকে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় আনা হয়। গ্রেফতার করা হয়েছে বাসিরের ছেলে সাদ্দামকেও। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই খুনের বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ। সাদ্দামকে সঙ্গে নিয়ে আজ ওই জলাশয়ে তল্লাশি চালানো হয়। উদ্ধার হয় বারিকের মুণ্ডহীন দেহ।
মৃতদেহ উদ্ধারে পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামানো হয় RAF। অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে সরব হয় এলাকাবাসী। অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি জানালেন সায়েমা বিবি। নিহতের ভাই সাহেবজান বলেন, “বাসির চায় যে ও একাই এলাকায় রাজত্ব করবে। আমরা বাধা দেওয়ায় একাধিকবার আমাদের উপরে গুলি চালানো হয়েছে। আমাকেও একবার গুলি করা হয়েছিল। কোনওরকমে প্রাণে বেঁচেছি।”
তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগে এখনও পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয়কুমার দাস বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। বারিকের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।” ধৃতদের আজ চাঁচল মহকুমা আদালতে তোলা হবে।
তৃণমূল কর্মী খুনে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিজেপির জেলা সম্পাদক কিষাণ কেডিয়া বলেন, “ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে তৃণমূলের বিবাদেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মানুষ তৃণমূলের প্রকৃত চেহারা বুঝতে পারছেন। পুলিশ যাতে কড়া পদক্ষেপ করে সেই দাবি জানাচ্ছি।”
তৃণমূলের হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লক সভাপতি মহম্মদ হজরত আলি দাবি করেন, “দুই পক্ষই শাসকদলের কর্মী হলেও এর সঙ্গে দলের কোনও বিষয় নেই। এটা ওদের দু’পক্ষের পুরনো বিবাদ। আইন আইনের পথে চলবে।”