মালদহ: হাই মাদ্রাসায় এবার প্রথম হয়েছে মালদহের ভাদোর শরিফা খাতুন। ৭৮৬ নম্বর পেয়ে রাজ্যে প্রথম হয়েছে সে। পড়াশোনায় ছোট থেকেই মেধাবী শরিফা। রতুয়ার ভাদো মুসলিম গার্লস মিশনের এই ছাত্রীর খুব ইচ্ছে ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করার। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হতে চায় সে। এত ভাল রেজাল্ট তাঁর দু’চোখের স্বপ্ন আরও কিছুটা রঙিন করে তুলেছে। কিন্তু যখনই স্বপ্নের উড়ান বাস্তবের মাটিতে নামছে, চোখ তখন কিছুটা ঝাপসা। ওর বাবা মাঠে কাজ করেন। সঙ্গে বাড়ির সামনেই ঝালমুড়ির দোকান দেন। কিন্তু যা আয় হয় তাতে সংসারই ভাল মত চলে না। তাতে আবার ছোট মেয়ের ডাক্তারি পড়া, অলীক কুসুম কল্পনা। তবু মন থেকে মেয়েটা চাইছে, কেউ এগিয়ে আসুক। পড়াশোনার জন্য সাহায্য করুক।
শরিফার বাবা উজির হোসেন খুব একটা লেখাপড়া জানেন না ঠিকই। কিন্তু মেয়ের এই সাফল্যের অন্যতম ভাগীদার তিনিই। শরিফা জানায়, লকডাউনের সময় তার ভয় হত এবার হয়ত পরীক্ষা বাতিলই হয়ে যাবে। কিন্তু তার বাবা সবসময় বলত নিজেকে তৈরি রাখতে। পরীক্ষা হবেই। শরিফার কথায়, “আমি জানতাম এক থেকে দশের মধ্যেই থাকব। কিন্তু ভাবতে পারিনি যে বোর্ডে প্রথম হয়ে যাব। আমার স্যর, ম্যাডাম সকলেই বলতেন তুমি এক থেকে দশের মধ্যে থাকবেই। এই উৎসাহ নিয়ে পড়াশোনা করেছিলাম। খুবই ভাল লাগছে।”
বাবার অনুপ্রেরণাই শরিফার কাছে বটবৃক্ষের ছায়া। শরিফা জানায়, “আব্বু সবথেকে বেশি গাইড করত। যখন লকডাউন শুরু হয়, আমার খালি মনে হত পরীক্ষাটা এবার বোধহয় আর হবে না। কিন্তু আব্বু সবসময় বলত, দেখবি ঠিক পরীক্ষা হবে। পড়াশোনাটা ঠিক রাখ। আমার আব্বু অতটা পড়াশোনা জানে না ঠিকই। তবে আমার প্রতি, আমার পড়াশোনার প্রতি খুব নজর।” এই মিশনের ছাত্রীরা বটতলা আদর্শ হাই মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিয়েছে। শরিফাও তাই। দিনে সাড়ে আট থেকে ন’ ঘণ্টা পড়াশোনা করত সে।
শরিফার বাবা উজির হোসেন জানান, সোমবার সকালে কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। রতুয়া থেকে মালদহ শহরের দিকে গিয়েছিলেন। হঠাৎই মেয়ের স্যর ফোন করে খবরটা দেন। উজির হোসেন বলেন, “ঝালমুড়ি, তেলেভাজার দোকান চালিয়ে সংসার। তবু মেয়ের কোনও অভাব রাখিনি।” শরিফার মা সায়েদা একেবারেই সাদামাটা গৃহবধূ। গুছিয়ে কথাই বলে উঠতে পারছেন না সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। তবে মেয়ের এই সাফল্যে বাড়িতে এত মানুষের আনাগোনায় তিনি বুঝতে পারছেন, এ মেয়ে যে সে মেয়ে নয়। তিনিও একেবারে সাধারণ মা নন। এমন কৃতীকে তিনিই তো শরীরে লালন করেছেন, পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন। শরিফা এদিন ফল প্রকাশের পর মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছে, তার উচ্চশিক্ষার একটা ব্যবস্থা যদি করা যায়। খুব ইচ্ছে, গলায় স্টেথো ঝুলিয়ে বিপদে আপদে মানুষের পাশে দাঁড়াবে রতুয়ার ভাদো গ্রামের দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের এই মেধাবী। শরিফারা স্বপ্ন বোনে। স্বপ্নকে বাস্তব করতে শেষ পর্যন্ত লড়ে যায়। এই শরিফাও ঠিক পারবে।