মালদহ: শনি-মঙ্গলবার হলেই কে যেন ছেলেটাকে মারে। বাড়ির লোকেরা বলে, ভূতে ধরে। কিন্তু কিছুতেই বিশ্বাস হয়নি মায়ের। এরপর ‘ভূত’ ধরতে ফাঁদ পাতেন তিনি। গত মঙ্গলবার স্নানে যাওয়ার আগে ঘরে মোবাইলের ক্যামেরাটা অন করে রাখেন। এরপর ফিরে এসে যে দৃশ্য দেখেন তা শিউরে ওঠার মতো। দু’বছরের শিশুর জ্যেঠিমা ঘুম থেকে তুলে ওই বাচ্চাকে দু’বার মাটিতে আছাড় মেরে আবার বিছানায় শুইয়ে দেন। কেঁদেই চলে বাচ্চাটা। জ্যোঠিমা যাওয়ার আগে বলে যান, ‘ঘুমা ঘুমা’। বীভৎস সেই ঘটনা। এরপরই বাড়ির লোকের বাধা সত্ত্বেও থানায় যান শিশুর মা। লিখিত অভিযোগ জানান। তার ভিত্তিতেই অবশেষে মালদহ থানার পুলিশ গ্রেফতার করে অভিযুক্ত শিবানী বিশ্বাসকে। মালদহ থানার যাত্রাডাঙা রানিরনগর গ্রামের এই ঘটনা।
শিবানির স্বামী আবার এলাকার তৃণমূল নেতা। এক সময় পঞ্চায়েত সদস্যও ছিলেন। শিশুটির মা অপর্ণা বিশ্বাসের অভিযোগ, ভাশুর বাড়ির কথা বাড়িতেই মিটিয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন। সালিশি সভাতেই ইতি টানতে চেয়েছিলেন এই নৃশংসতার। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামের গৃহবধূ অপর্ণা সন্তানের নিরাপত্তার কারণে কোনও কথাতেই প্রভাবিত হননি বলে দাবি এলাকার লোকজনের। শনিবার তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় শিবানীকে। কেন করলেন শিবানী এমন কাণ্ড? এদিন থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় শিবানী বলেন, “আমি নিজেও বুঝতে পারিনি কী হয়ে গেল। কেন যে এমন করলাম জানি না। ভুল হয়ে গেছে আমার।”
অপর্ণার কথায়, “দিনের পর দিন এই ঘটনা ঘটছে। আমি বারবার বললেও কেউ আমার কথা বিশ্বাস করে না। বাড়ির কারও সমর্থন নেই। এরপরই আমি ঘরে একটা ক্যামেরা রাখি। যেদিনই ওর বাবা বাড়ি থাকে না ছেলেটার উপর এরকম অত্যাচার হয়। শনিবার আর মঙ্গলবার এসব করে। বাড়ির লোকেরা বলে, ছেলেকে নাকি ভূতে ধরে। ভূতে মেরে রেখে চলে যায়। এরপরই আমি ঠিক করি মোবাইলের ক্যামেরা চালু করে রেখে আসব। আমি স্নানে যাওয়ার আগে সেদিন মোবাইলটা অন করে রেখেছিলাম। সতর্কও ছিলাম। ছেলে কাঁদলেই ছুটে যাব। ঠিক তাই। ঘরে গিয়ে দেখি ওর জ্যোঠিমা ওকে এভাবে আছাড় মারছে। তার মানে উনিই আগে মারতেন। আমি যে থানায় যাব, এতদিন কোনও প্রমাণ ছিল না। কেউ আমার কথা বিশ্বাসও করত না। কিন্তু মঙ্গলবার আমিও হাতেনাতে সব প্রমাণ নিই। এদিকে এসব দেখানোর পর বাড়ির লোকেরা বলছে, বাড়ির কথা বাইরে বলো না।”