ইংরেজবাজারে অধিবেশন কর্মসূচিতে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।
মালদহ: জেলা সফরে বৃহস্পতিবার মালদহে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। অন্যদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচি নিয়ে এদিন একই জেলায়। ইংরেজবাজারে অধিবেশন কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটা গণ জাগরণের একটা পদ্ধতি।” একইসঙ্গে মমতার মন্তব্য, “আমি অভিষেককে অনেক বারণ করেছিলাম। ওদের বয়স অনেক কম। দু’বারের সাংসদ। কিন্তু এতদিন ধরে। ওকে না করেছিলাম। ঝড়, জল, বিদ্যুৎ। এখনকার বিদ্যুৎ যেভাবে অসম্ভবভাবে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। এই দুর্যোগ, দুর্ভোগে এক টানা ২ মাসের প্রোগ্রাম না নিতে। আমরা বলেছিলাম কয়েকদিন বাদ দিয়ে দিয়ে করতে। কিন্তু এখনকার ছেলেরা জেদ বেশি, ওরা শোনেনি। তারা মনে করে রাস্তায় থেকে জীবনটাকে একটু দেখেনি। মানুষকে চিনি, জানি। তাই ওদের এই প্রোগ্রামের নাম নবজোয়ার। জনসংযোগ যাত্রা।”
অধিবেশনে যা বললেন মমতা
- আমার আগে অভিষেক যা বলার বলেই দিয়েছে। আমাকে বলছে স্টেজে একটাও চেয়ার নেই। আমি বললাম, তুই খুব চালু। বলল কেন? আমি বললাম তুই এক্সারসাইজ করার টাইম পাচ্ছিস না, তাই মঞ্চে ঘুরে ঘুরে তোর অনেকগুলো পা হাঁটা হয়ে যাচ্ছে। আমি এরকমভাবে খুঁজি তো। যেখানে জায়গা থাকে না ঘরেই করেনি। এটা সহজ নয়। ওরা চেষ্টা করছে। ১০টা দিন পার করে এসেছে ওরা। নট অ্যা ম্যাটার অব জোক: মমতা
- আমি আমার জীবনে ২৩ হাজার কিমি জনসংযোগ করেছি একবার। বেলপাহাড়ি থেকে। সম্ভবত ১৯৯৩ হবে। আমাকে কিছুতেই সিপিএম ঢুকতে দেবে না। আমি একটা স্কুটার রেডি রেখেছিলাম। আমি গ্রামে ঢুকে পড়ি জোগ্রামে। গিয়ে দেখি রান্না হচ্ছে। রান্নায় কালো কালোয় কীসব ভাসছে। জিজ্ঞাসা করলাম কী রান্না করছ? বলল, গাছের মূল, শিকড়। জঙ্গল থেকে তুলে আনি। সারা গায়ে দাগ। বলল, কালো কাঠপিঁপড়ে তুলে নিয়ে আসে। তারাই গায়ে কামড়ায়। বলেছিল, বছরে ৬ মাস এভাবেই কাঠপিঁপড়ে আর গাছের শিকড় দিয়ে আমরা তরকারি রান্না করে স্যুপের মতো করে খাই। : মমতা
- বলেছিলেন ৬ মাস খেতে পাই, ৬ মাস খেতে পাই না। আমি বেলপাহাড়িতে গিয়ে অনাহার দেখে এসেছিলাম। সাঁকরাইলে দেখেছি। আমি দেখেছি মাওবাদীদের আতঙ্কে মানুষ কাঁপছে একদিকে। অন্যদিকে ঘরে খাবার নেই। হাসপাতাল নেই, কলেজ নেই, স্কুল নেই, থানা নেই। কিছুই নেই। মনেপড়ে আমলাশোলের কথা? : মমতা
- দলের ইতিহাস না জানলে কী করে জানবেন তৃণমূল কংগ্রেস কত সংগ্রাম করেছে? দল যে সংগ্রাম করে এসেছে, পৃথিবীতে কেউ আর এই সংগ্রাম করতে পেরেছে কি না সন্দেহ আছে। : মমতা
- আমি আদিবাসী মেয়েদের সঙ্গে গল্প করছিলাম। বলছিলাম, তোমরা তো দেখছ, আমি সুস্থ মানুষ। তোমরা কি জানো আমি একটা জীবন্ত লাশ? আমার মাথা ফাটিয়ে চৌচির করে দেওয়া হয়েছিল। একটা লোহার ডান্ডা মারল। আমি তখন মিছিলে। মাথা ফেটে গেল। দেখছি গলগল করে রক্ত পড়ছে। আরেকটা ডান্ডা মারল। দেখছি দু’দিক থেকে ঝর ঝর করে রক্ত পড়ছে। থার্ড ডান্ডা মারল, ব্রেনটা স্ম্যাশড হয়ে যেত। : মমতা
- অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। ২১ জুলাই কোমর ভেঙে দেয়। জানেন অনেকেই, আমার শরীরে অনেক পার্টস নেই। অপারেশন করে বাদ দিতে হয়েছে। আমি লড়াই করে কষ্ট করে এই জায়গায় এসে একটা দল তৈরি করেছিলাম। : মমতা
- মেমারির করান্দায় দেখেছি একটা ছোট্ট শিশুকে মুড়ির টিনে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এখন যারা এসেছেন তারা অনেকেই জানেন না। পারলে ‘উপলব্ধি’ বইটা পড়বেন। আমার জীবনের প্রথম অংশটা ওখানে পাবেন। তারপর আসতে আসতে ‘জনতার দরবার’, আরও বই আছে। ১ হাজার কবিতা হয়ে গিয়েছে কবিতাগ্রন্থ ‘কবিতাবিতান’-এ। সেটাও নিজেদের কাছে রাখতে পারেন। ইংলিশ, বাংলা কপি হয়েছে। শায়েরি লিখেছি উর্দুতে। সাঁওতালি ভাষাতেও লিখেছি। লেখাটা আমার প্রিয়। লিখতে ভালবাসি। : মমতা
- মানুষ অভিষেকদের এই প্রোগ্রাম সাপোর্ট দিচ্ছে। তাই আমি এর গুরুত্ব দিচ্ছি। মানুষের সংযোগ ছাড়া আমি প্রোগ্রাম গুরুত্ব দিই না। এই কর্মসূচি নিয়ে কেউ কেউ কিম্ভূতকিমাকার হারতে হারতে জীবন শুরু হয়েছে সব যা খুশি বলে। আমি জুতোকে অসম্মান করি না। জুতো ছাড়া চলতে পারি না। কিন্তু জানেন তো প্রবাদপ্রতিমরা বলেন, জুতোটা পায়ে শোভা পায়। জুতো পায়ে পরে, মাথায় পরে না। : মমতা
- সবাই চোর, সবাই ডাকাত। মাঝে মাঝেই এজেন্সি দেখাচ্ছে। টাকা দিয়ে লোক কেনা, সাগরদিঘির কেস আমি জানি। কে, কোথা থেকে টাকা দিয়েছে জানি। এখন আবার একটা পার্টি হয়েছে হায়দরাবাদের সঙ্গে যোগাযোগ, আর অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ। ক্যাশ বেলুন চলছে। গ্যাস , ক্যাশ হয়ে অ্যাশ হয়ে ভ্যানিশ হয়ে যাবে। : মমতা
- ব্যপম নিয়ে তদন্ত হয় না কেন। ৫৪ জন মারা গেছিল। এভাবে এজেন্সি পাঠানো বেআইনি। পরে প্রমাণ হবে। :মমতা
- এই যে গঙ্গাভাঙন ১০০ বছর ধরে চলছে। সবাই এসেছে, চলে গিয়েছে। কিছুই করেনি। অথচ এটা কেন্দ্রের অধীনে। ফরাক্কা কেন্দ্রের অধীনে। আমাদের জল বাংলাদেশকে দিলে আপত্তি নেই। হাসিনাজিকে আমি ভালবাসি। কিন্তু আমাকে যে তার পরিবর্তে ৭০০ কোটি টাকা দেবে বলেছিলে, আমার বাংলা সরকারকে, আজও তো দাওনি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৫০ বার গিয়েছি। ৫০ বার, অতবার যাইনি। ৭-৮বার তো গিয়েছি। : মমতা