আশিক ইনশান, মনোতোষ পোদ্দার
কলকাতা: সাজা ঘোষণার আগে বছরের পর বছর ঘুরেছেন এক জেল থেকে অন্য জেলে। কখনও পশ্চিম মেদিনীপুর তো কখনও হুগলির চুঁচুড়া জেলা সংশোধনাগারে, বন্দি দশাতেই চালিয়েছেন পড়াশোনা। মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়ে গিয়েছেন ইতিহাসে স্নাতক, স্নাতকোত্তরের ডিগ্রি। এদিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা ঘোষণা করে আদালত। সাজা ঘোষণার সময়েই জেল থেকে পিএইচডি করার আবেদন জানিয়েছিলেন। যদিও জেলে আসার পর তাঁর আবেদনে পাত্তা দিচ্ছিলেন না কেউ। মাঠে নামে এপিডিআর। জোরদার আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। আর তাতেই হল কাজ। অবশেষে জেলবন্দি থেকেই পিএইচডি-র ইন্টারভিউ দিয়ে ফেললেন অর্ণব দাম। পুলিশের খাতায় তাঁর পরিচিতি কিন্তু মাওবাদী হিসাবে। সেই মাওবাদীর হাত ধরেই কি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে তৈরি হতে চলেছে নতুন ইতিহাস? কারণ এদিন অর্ণব ইন্টারভিউ দিলেন সেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েই। তাঁকে নিয়েই এখন জোর চর্চা শিক্ষা মহলের অন্দরে।
ছোট থেকেই মেধাবী বলে পরিচিতি
আদপে কলকাতার গড়িয়ার বাসিন্দা অর্ণব ছোট থেকেই এলাকায় মেধাবী ছাত্র বলেই পরিচিত ছিলেন। বাবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এস কে দাম। মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন খড়গপুর আইআইটি থেকে। সূত্রের খবর, তিনটি সেমিস্টার পড়ার পরেই ক্যাম্পাসে আর দেখা যায়নি তাঁকে। একেবারে গায়েব। দীর্ঘদিন নিরুদ্দেশ থাকার পর শোনা যায় পুরুলিয়ার ঝাড়খণ্ডের পাহাড়ে ডেরা বেঁধে ফেলেছেন অর্ণব। সালটা ১৯৯৮। মাওবাদী সংগঠনে যোগ। শোনা যায় কিছুদিনের মধ্যেই দাপুটে মাওবাদী নেতা কিষেণজির অত্যন্ত স্নেহের পাত্র হয়ে ওঠেন এই অর্ণব ওরফে বিক্রম। লালগড় আন্দোলনের সময় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী নাজেহাল করে দিয়েছিল এই অর্ণবের গেরিলা বাহিনী।
কোন ঘটনায় গ্রেফতার?
এরইমধ্যে ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় নাম জড়ায় অর্ণবের। তাঁর সঙ্গে নাম উঠে আসে আরও ২২ জনের। ওই হামলায় ২৪ পুলিশের (ইএফআর বাহিনী) মর্মান্তিক মৃত্যুও হয়। তারপর থেকে চলছিল ট্রায়াল। অবশেষে চলতি বছরের শুরুতে হয় সাজা ঘোষণা। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সাজা ঘোষণার পর প্রথমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেল তারপর গত ১৭ মার্চ থেকে হুগলি জেলা সংশোধনাগারে বন্দি রয়েছেন। সাজা ঘোষণার সময় পিএইডি করার আবেদন জানালে বিচারক তা দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশও দেন বলে খবর। কিন্তু, তারপর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও তার কোনও ব্যবস্থা না হওয়ায় অনশন করার হুঁশিয়ারি দেন অর্ণব। চাপ তৈরি করে এপিডিআর-ও। তারপরেই নড়েচড়ে বসে কারা কর্তৃপক্ষ।
এদিন পিএইচডি-র মৌখিক ইন্টারভিউ দিতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে যান অর্ণব। নির্দিষ্ট সময়ের আধ ঘন্টা আগেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে হাজির হন। ছিল কড়া পুলিশি প্রহরা। তারমধ্যেই হয় ইন্টারভিউ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বরিষ্ঠ উন্নয়ন আধিকারিক তথা কলা অনুষদের সচিব ইন্দ্রজিৎ রায় বলেন, “উনি ইন্দিরা গান্ধী ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ডিগ্রি পেয়েছেন। নিয়ম মেনেই উনি আবেদন করেছিলেন। আমরা সেই আবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের গোচরে এনেছিলাম।”