একমাত্র সরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, নেই বই-চেয়ায়-টেবিল-বিদ্যুৎ, ফটোকপি করে চলছে পড়াশোনা!

সৈকত দাস |

Feb 09, 2021 | 11:29 PM

পাশের কলেজ থেকে ধার করে আনা চেয়ার-টেবিল দিয়ে চলছে পড়াশোনা, পড়ুয়া-অভিভাবকদের অভিযোগে ভ্রুক্ষেপ নেই দফতরের

একমাত্র সরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, নেই বই-চেয়ায়-টেবিল-বিদ্যুৎ, ফটোকপি করে চলছে পড়াশোনা!

Follow Us

 

শিলিগুড়ি: জেলার একমাত্র ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। কিন্তু পড়ুয়াদের কোনও পাঠ্যবই নেই। প্রতি বিষয়ের একখানা বই থেকে ফটোকপি করে চলছে পড়ুয়াদের শিক্ষাদান। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা তো দূরের কথা, স্কুলে চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চই নেই!করোনার জেরে দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ স্কুল। মিড ডে মিল দিতে আসছেন শিক্ষকেরা। তখন বসার জন্য কোনও সহৃদয় ব্যক্তির থেকে ধার করে আনছেন চেয়ার, টেবিল! এমনই বেহাল পরিস্থিতিতে চলছে শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলায় তৈরি হওয়া একমাত্র ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ।

বিভিন্ন জেলায় সরকারি স্কুল বা জেলা স্কুল থাকলেও, শিলিগুড়িতে এমন কোনও স্কুল ছিল না। ১৯৯০ সালে শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলা স্থাপনের পর স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল জেলা স্কুলের ধাঁচে একটি বিদ্যালয় তৈরি হোক এখানেও। সেই দাবি মেনে রাজ্য সরকার পরিচালিত জেলা স্কুলের ধাঁচে নতুন ইংরেজি মাধ্যম হাই স্কুল তৈরি হয় ফাঁসিদেওয়াতে।

২০১৪ সালে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব ফাঁসিদেওয়া মডেল স্কুল ভবনের উদ্বোধন করেন। এরপর কেটে যায় দীর্ঘ পাঁচ বছর। অবশেষে ২০১৯ সালের প্রথমদিকে এই স্কুলের ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। তারপর সেই ভবন পূর্ত দফতর হস্তান্তর করে জেলা শিক্ষা দফতরকে। ২০২০ শিক্ষাবর্ষে হইহই করে শুরু হয় ক্লাস। মাত্র ২৪০ টাকার বিনিময়ে সরকারি ইংরেজি স্কুলে ভালো পঠনপাঠনের আশা নিয়ে বহু অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের ভর্তি করেন এই স্কুলে। ছ’জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকও যোগদান করেন। কিন্তু পঠনপাঠনের নামে যা চলছে তাতে পড়ুয়াদের এই স্কুল থেকে ছাড়িয়ে অনত্র নিয়ে যেতে চান বেশিরভাগ অভিভাবক।

আরও  পড়ুন: ভিডিয়ো: হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন রোগী, ডাক্তার-নার্স ব্যস্ত মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের সঙ্গে!

শিক্ষকরা স্কুলে এসে কাজ সারছেন পাশের কলেজ থেকে ধার করে আনা চেয়ার-টেবিল দিয়ে। সরকার পরিচালিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। অথচ করোনা পরিস্থিতিতে বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ দফতর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। এরকম বহু অভিযোগ শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়া মডেল স্কুলের বিরুদ্ধে। কিন্তু শিক্ষা দফতর সে বিষয়ে উদাসীন। অভিভাবকদের অভিযোগ, একাধিকবার প্রশাসনের কাছে দরবার করেও সুরাহা মেলেনি। সামনের মার্চে স্কুল খোলার আগেই স্কুলে সকল সমস্যা সমাধানের দাবি তুলেছেন তাঁরা। অনেকে আবার আশা ছেড়ে ছেলেমেয়েদের অন্য স্কুলে ভর্তি করার কথা ভাবছেন।

জানা গিয়েছে, ২০২০ সালে লটারির মাধ্যমে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় বেশ কিছু পড়ুয়া। এখন ওই স্কুলে পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১১৪ জন পড়ুয়া আছে। আগামীতে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলকে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। অথচ যেভাবে স্কুল চলছে তাতে আগামী দিনে স্কুল উঠে যাওয়ারই উপক্রম। অভিভাবকের অভিযোগ, স্কুল থেকে পাঠ্যবইয়ের বদলে একটি করে বই-র ফটোকপি বরাদ্দ হয়েছে পড়ুয়াদের জন্য। কিন্তু সেই অষ্পষ্ট কালো অক্ষরের ফটোকপি-বই বেশিরভাগ পড়ুয়ারই বোধগম্য হয় না। এদিকে করোনার জন্য স্কুল বন্ধ থাকায় যে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে তা নিয়েও বহু অভিযোগ। শিক্ষকরা নামমাত্র ক্লাস নিচ্ছেন, পড়ুয়াদের কাছে বই-ও নেই। কি শিখবে তারা। প্রশ্ন অভিভাবকদের। তাঁরা জানান, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় শাসক দলের নেতাদের কাছেও দরবার করেছেন। আশ্বাস মিলেছে, কিন্তু শিক্ষা দফতর থেকে বই আনানো যায়নি। এ নিয়ে শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলার স্কুল পরিদর্শক (উচ্চ মাধ্যমিক) রাজীব প্রামাণিক’কে বারবার ফোনে যোগোযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ফোন ওঠাননি তিনি।

Next Article