বহরমপুর: আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে শোরগোল। এরই মধ্যে মুর্শিদাবাদে ভাগীরথী নদী থেকে এক নার্সিং স্টাফের দেহ উদ্ধার ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠছে। বুধবার নার্সিংহোমে ডিউটি শেষে আর মেসে ফেরেননি সুচিত্রা মণ্ডল নামে ওই যুবতী। থানায় নিখোঁজ ডায়েরি হয়। শনিবার রাতে সাটুই সংলগ্ন এলাকায় নদী থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। মৃত যুবতীর পরিবার ও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ বলছে, সুচিত্রার মধ্যে কোনও অস্বাভাবিক আচরণ ওইদিন দেখা যায়নি। ওই যুবতী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন, নাকি এর পিছনে অন্য কারণ রয়েছে, সেই প্রশ্ন উঠছে।
বহরমপুরের কোদালা গ্রামে বাড়ি সুচিত্রার। বহরমপুরে একটি নার্সিংহোমে ২ বছরের বেশি নার্সিং স্টাফ হিসেবে কাজ করতেন। থাকতেন একটি মেসে। বুধবার রাত সাড়ে আটটার সময় ডিউটি শেষে নার্সিংহোম থেকে বেরোন। তারপর আর তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। বুধবার রাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, ভাগীরথী নদীর ব্রিজের উপর থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন কেউ। ব্রিজে পড়েছিল এক জোড়া জুতো। ওই জুতো সুচিত্রার বলে জানিয়েছিলেন তাঁর মা।
তাহলে কি আত্মহত্যা করেছেন সুচিত্রা? নাকি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে? কাউকে তাঁরা সন্দেহ করছেন কি না জানতে চাওয়া হলে সুচিত্রার মা সোনালি মণ্ডল বলেন, “আমার কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। কী করে এটা হল, সেটা খুঁজে বের করুন। সেদিন রান্না করে ডিউটি গিয়েছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চারবার ফোন করেছে। সন্ধে সাড়ে সাতটায় ফোন করেছে। আবার সাড়ে আটটায় ফোন করে জানায়, ডিউটি শেষ হয়েছে, মেসে ফিরছে। আমি বললাম, হেঁটে আসবি না টোটোয় আসবি। বলল, হেঁটে ফিরব।” সপ্তাহে ২ দিন সুচিত্রা বাড়ি আসতেন বলে জানান তিনি।
সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, মেয়ে কি কোনও আশঙ্কার কথা বলেছিল? সুচিত্রার মা বলেন, “মেয়ে একটু চাপা স্বভাবের। তবে কখনও কোনও আশঙ্কার কথা বলেনি।” মেয়ের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সুচিত্রার বাবা মোহনলাল মণ্ডল বলেন, “মেয়ে সারাদিন সুস্থভাবে কাজ করেছে। সুস্থভাবে নার্সিংহোম থেকে বেরিয়েছে। তাহলে কেন ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিতে গেল? সঠিক তদন্ত করে বের করুক পুলিশ।” তবে কারও উপর কোনও সন্দেহ নেই বলে জানান তাঁরা।
ওই নার্সিংহোমের ম্যানেজার শ্যাম অধিকারী বলেন, “৪ সেপ্টেম্বর ২টোর দিকে নার্সিহোমে ঢুকেছিল। সারাদিন ডিউটি করেছে। একটু চাপা স্বভাবের মেয়ে। কম কথা বলত। ডিউটি শেষে স্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে গিয়েছে। রাত এগারোটার দিকে ওর রুমমেটরা ওকে ফোন করেছিল। ফোন বন্ধ ছিল। তখন রুমমেটরা ধরে নেয়, সুচিত্রা বাড়ি গিয়েছে। পরদিন সকালে সুচিত্রার বাড়িতে তাঁর রুমমেটরা ফোন করে। তখন জানতে পারে, বাড়িও যায়নি সে। তখন তারা আমাকে জানায়।” তিনি জানান, তারপরই তাঁরা পরিজনদের ফোন করে ডাকেন। এবং নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
নার্সিংহোমে কারও সঙ্গে সমস্যা ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, “এই নার্সিংহোমে ২ বছরের বেশি ছিল। কারও সঙ্গে সুচিত্রার কোনও সমস্যা ছিল না। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। এর পিছনে অন্য কোনও বিষয় রয়েছে কি না, তা বেরিয়ে আসুক।”
গতকাল রাতে ভাগীরথী নদীতে এক যুবতীর দেহ ভাসতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুচিত্রার পরিবার শনাক্ত করার পর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)