Kalyani Medical College: ‘বিছানায় ঠেলে ফেলে, বলছিল চোখ নামিয়ে রাখ, আমি শুধু চোখে চোখটাই রাখতে পারি তখন, শরীরে তো…’, কল্যাণী মেডিক্যালে আরও এক ডাক্তারি ছাত্রীর আর্তনাদ
Kalyani Medical College: ওই ছাত্রীর আইনজীবী বলেন, "ওই মেয়েটিকে তো ঘরে ঢুকে মারা হয়েছিল, একজন মহিলার গায়ে হাত দেওয়া মানেই শ্লীলতাহানি করা। আমাকেও থ্রেট করেছিলেন আগের প্রিন্সিপ্যাল, বলেছিলেন, মেয়েটার কেসটা তুলে নেওয়া জন্য। আমাকেও টাকার অফার করা হয়েছিল। মেয়েটির বাবাকেও হুমকি দেওয়া হয়।"
নদিয়া: ‘আমাদের বাঁচান….’, এবার কাতর আর্জি আরও একটি ডাক্তারি পড়ুয়া। আরও এক তিলোত্তমার খোঁজ কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজের। আরজি করের তিলোত্তমার বিচারে সরব শহর কলকাতা। এই পর্বে উঠে এসেছে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে একাধিক দুর্নীতি, থ্রেট কালচারের অভিযোগ। কনভোকেশনে অংশ নিতে গিয়ে টিএমসিপি নেতাদের রোষের মুখে ডাক্তারি ছাত্রী। মধ্যরাতে ঘরে ঢুকে শ্লীলতাহানি, মারধরের অভিযোগ ডাক্তারি পড়ুয়াকে। অভিযোগ, ঠেলে বিছানায় ফেলে নাকে ঘুষি মারা হয়েছে। অভিযোগ জানাতে গিয়েও হেনস্থার মুখে পড়েছেন কল্যাণীর তিলোত্তমা। প্রাণভিক্ষা চেয়ে অভিযোগ জানানোয় লাগাতর হুমকি। এমনকি পরিবারকেও অভিযোগ দেওয়ার অভিযোগ কল্যাণী মেজিক্যাল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। মামলা তোলার জন্য অধ্য়ক্ষ চাপ সৃষ্টি করেন বলেও অভিযোগ। কল্যাণীর তিলোত্তমার অসুস্থ বাবা-মাকেও বারবার ফোনে হুমকি দেওয়া হয় বলে ডাক্তারি ছাত্রীর দাবি।
ঘটনাটি ঠিক কী? কল্যাণীর তিলোত্তমা সবটা বলেছেন TV9 বাংলার প্রতিনিধির কাছে। ঘটনাটি গত বছরের ২৮ এপ্রিলের। সেদিনকার একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, আর তারপর থেকে লাগাতর নিগ্রহ- কল্য়াণীর তিলোত্তমার মুখে উঠে এল বিস্ফোরক সব অভিযোগ।
ওই ডাক্তারি ছাত্রী বলেন, “সেদিন আমাদের সিনিয়রদের একটি কনভোকেশন পার্টিতে অংশগ্রহণ করার কথা ছিল। সেই নিয়ে আমরা প্র্যাকটিস করতে বসেছিলাম। সে সময়ে ইউনিয়নের কয়েকজন, হস্টেলের দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে। গায়ে হাত তোলে। জিনিসপত্র ওলটপালট করে।” তিনি অভিযোগ করেন, যাঁর নেতৃত্বে গোটা ঘটনাটি ঘটেছিল, তিনি হলেন আলিম বিশ্বাস। সঙ্গে আরও কয়েক জনের নাম করেছেন তিনি। ঋদ্ধিদ্বীপ বিশ্বাস, বিচিত্রকান্তি বালা, হাসানুর জামান মণ্ডল, জিদান ভার, সাগেন মুর্মু। এর ছাড়াও আরও কয়েকজন ছিলেন।
ছাত্রী অভিযোগ করেন, “ওরা বলেছিল, কনভোকেশনে আমরা যেতে পারব না। কারণ ওদের একটা অভ্যন্তরিণ বিবাদ ছিল, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছিল। সেখানে আমরা যেহেতু করতে চেয়েছি, তার জন্যই অ্য়াটাক করা হয়েছিল। আমাদের থ্রেট দেওয়া হয়েছিল, যে আমরা যদি কনভোকেশনে পারফর্ম করি, তাহলে আমাদের অ্যাকাডেমিক্সে হার্ম করা হবে। সাপ্লি করে দেওয়া হবে।”
আরেক ছাত্র বলেন, “খাগেন মুর্মুই আসলে দরজা ভেঙে ঢুকেছিল। তখন বাইরে থেকে আমারই ব্যাচমেট আলিম, ওঁ তখন প্রেসিডেন্ট ছিল, আমাকে চিৎকার করে ডাকছিল। বলছিল বাইরে আয়… তখন বলেছিলাম, কাল সকালে কথা হবে। জোর করে আমার ঘরে সাগেন দরজা ভেঙে ঢোকে, খাট উল্টে দেয়, লাথি মেরে দেয়, জলের ড্রাম দিয়ে আমার মাথায় মারতে যায়।”
নিগৃহীতা ডাক্তারি ছাত্রী বলেন, “আমাকে ঠেলে বিছানায় ফেলে দেওয়া হয়। হাসানুর জামান নাকে ঘুষি মারে। থ্রেট দিচ্ছিল, পাঁচ বছর তো এখানে থাকতে হবে, আমাদের বিরুদ্ধে গিয়ে কীভাবে থাকবি? যেরকম ভয় পেয়েছিলাম সেদিন, কখনও পাইনি। আমাকে বারবার বলা হচ্ছিল, চোখ নামিয়ে রাখ। কিন্তু আমি জাস্ট ওদের চোখে চোখটাই রাখতে পেরেছিলাম সেদিন, মুখে কোনও প্রতিবাদ করতে পারিনি। কারণ আমার শরীরটা কাঁপছিল।”
ডাক্তারি পড়াটা ছোটবেলার স্বপ্ন। বাবা-মায়েরও স্বপ্ন ওই ছাত্রীর। কিন্তু মেয়েকে ডাক্তারি পড়াতে পাঠিয়ে হুমকির শিকার হতে হয়েছে তাঁদেরও। অভিযোগ তেমনই। ওই ছাত্রী বলেন, “যে সিনিয়রদের আমি দেখেছিলাম, আমি কখনও ভাবিনি, এরকম একটা হিংস্র রূপ দেখতে হবে। যেহেতু এফআইআর করেছিলাম, তার পাল্টা একটা মিথ্যা এফআইআর করা হয়। এখন আদালতে মামলা চলছে। কিন্তু ফোন করে তখন প্রিন্সিপ্যাল স্যার বলতেন, যেন ফোন করে বিষয়টা মিটিয়ে নেওয়া হয়।”
ওই ছাত্রীর আইনজীবী বলেন, “ওই মেয়েটিকে তো ঘরে ঢুকে মারা হয়েছিল, একজন মহিলার গায়ে হাত দেওয়া মানেই শ্লীলতাহানি করা। আমাকেও থ্রেট করেছিলেন আগের প্রিন্সিপ্যাল, বলেছিলেন, মেয়েটার কেসটা তুলে নেওয়া জন্য। আমাকেও টাকার অফার করা হয়েছিল। মেয়েটির বাবাকেও হুমকি দেওয়া হয়।”
অভিযুক্ত চিকিৎসক ছাত্রনেতা আলিম বিশ্বাস বলেন, “আমি এই ঘটনার সঙ্গে কোনওভাবেই যুক্ত নই। আমাকে জড়ানো হয়েছে। ওই সময়ে আমি সভাপতি ছিলাম। কেউ হয়তো আমাকে অপদস্থ করতে চাইছেন। এই আরজি কর কাণ্ডের আবহে অনেকেই রাজনৈতিকভাবে অনেক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন।”
অভিযুক্ত আরেক চিকিৎসক নেতা অখিল বলেন, “ফার্স্ট ইয়ারে যখন এসেছিল ও, তখন থেকেই ওর সঙ্গে আমাদের পরিচয়। এই ঘটনার সঙ্গে কোনওভাবেই ডিরেক্ট আমি জড়িত নই। সেটা ওকে জিজ্ঞাসা করলেই বলবে। এফআইআর-এও আমার নাম নেই।”
তৎকালীন অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমি কোনও চাপ দিইনি। ছেলেমেয়েদের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছিল। দুজনের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল, তারপর দুপক্ষই বলেছিল, ঝামেলা মিটিয়ে নেবে।” আরজি কর কাণ্ডের মধ্যেই কল্যাণীর তিলোত্তমার এই বক্তব্য তুলে ধরল মেডিক্যাল কলেজের বিপন্নতা।