কলকাতা ও নদিয়া: বুধবার নদিয়ার কৃষ্ণনগরে জনসভা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আর সেখান থেকেই তৃণমূল সুপ্রিমোর গলায় ফের একবার ‘ভুল করার অধিকারের’ কথা উঠে এল। বললেন, “একটা দুটো লোক ভুল করতে পারে। তার জন্য সবাই ভুল করে না। তাঁকে শাসন করে ভাল করতে হয়। আমি চাই, যাঁরা ভুল-ত্রুটি করবে, তাঁরা শুধরে নেবে। সংশোধন করে নেওয়াটা আমাদের ধর্ম। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন, রাইট টু মেক ব্লান্ডার্স। ভুল করার অধিকারও একটি অধিকার। সেটিকে সংশোধন করতে হবে। আমি চাই তৃণমূল কর্মীরা মাথা উঁচু করে চলবে। কোনও লোভ যেন তাঁদের গ্রাস করতে না পারে। এই অর্থের মূল্য হচ্ছে অনর্থ। লোভ করে অর্থ করা মানে, যাঁর কাছে রাখছেন সে মেরে দিচ্ছে। লোভ করে অর্থ করা মানে, সমাজে বদনাম হচ্ছে।”
উল্লেখ্য, তৃণমূল সুপ্রিমো যখন ‘ভুলের অধিকারের’ পক্ষে সওয়াল করছিলেন, তখন কোন ভুলের কথা তিনি বলতে চাইছিলেন, সেই বিষয়টি স্পষ্ট নয়। তবে তিনি যে নদিয়া জেলায় দাঁড়িয়ে এই কথা বলছিলেন, সেটি মানিক ভট্টাচার্যের জেলা। নদিয়ার পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক তিনি। নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। এমন অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। টিভি নাইন বাংলার বিকেলের বিতর্ক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এই ‘ভুলের অধিকারের’ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র ঋজু দত্ত বলেন, “যাঁরা কাজ করেন, তাঁরাই ভুল করেন। সেই ভুল যদি অন্যায়ে পরিণত হয়, তাহলে প্রশাসন প্রশাসনের মতো ব্যবস্থা নেবে। দল দলের মতো ব্যবস্থা নিয়েছে এবং আগামী দিনেও নেবে।” সঙ্গে তিনি এও বলেন, “এর সঙ্গে মানিক ভট্টাচার্যকে আড়াল করার প্রশ্নই ওঠে না। যাঁরা ভুল করবে, তৃণমূলের জিরো টলারেন্স পলিসি, তাঁরা জেলে যাবেন।”
বিজেপি নেত্রী কেয়া ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, “রাইট মানে যদি অধিকার হয়, তাহলে এটি কীসের অধিকার? দুর্নীতি করার অধিকার? দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র-যুবদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নেওয়ার অধিকার? এই অধিকার কে দিয়েছেন?” সিপিএম নেতা সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “যেটিকে ভুল বলা হচ্ছে… প্রিভেনশন অব কোরাপশন অ্যাক্টে যেটিকে সাধারণ মানুষ কোরাপশন বলেন, তাঁর কাছে সেটি ভুল। দুর্নীতি সংক্রান্ত যাবতীয় আইনে যেটিকে দুর্নীতি হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সেটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ভুল।” আক্রমণের সুর আরও চড়িয়ে সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরাও চাই তৃণমূল নেতারা সংশোধন করুক। শুধু সংশোধন করার সময় লোকালয়ে থাকবেন না, সংশোধনাগারে সংশোধন করবেন।”
কংগ্রেস মুখপাত্র সুস্মিতা বিশ্বাস জানান, “এই কথাটা ঠিক যে মানিক ভট্টাচার্য, পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়রা ধরা পড়ার পর থেকে উনি এই ভুলের কথা বলছেন। উনি নিজের ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছেন। কারণ সামনে পঞ্চায়েত ভোট। মানিক ভট্টাচার্যের জায়গা বলে উনি বার বার এই কথা বলছেন।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এদিন সাংবাদিক বৈঠকে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানিয়ে বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মাঝে মধ্যেই এমন এমন কথা বলেন, যা হাস্যরসাত্মক। ভুল করার অধিকার নাকি লোকের থাকা উচিত। এটা উনি মনে করেছেন বলেই নেতাজির ছোট ছবির তলায় নিজে বড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এটিকে ব্লান্ডার বলে না, এটি অসভ্যতা।” সঙ্গে তাঁর আরও আক্রমণ, “তৃণমূলে সৎ লোক হল ব্যতিক্রম, অসৎ হল স্বাভাবিক।”