Nadia: পছন্দ হয়নি শিক্ষিকাকে, স্কুলে তালা মারলেন তৃণমূল নেতা
Nadia: অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিক্ষিকা টুকটুকি খাতুন বলেন, "১ জুলাই এখানে কাজে যোগ দিয়েছি। উনি ২ তারিখ চাবি দিয়ে দেন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের দাবি, ওঁর পছন্দের লোককেই নিয়োগ করতে হবে।"

নদিয়া: অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে তাঁর ঠিক করে দেওয়া শিক্ষিকাকে নিয়োগ করতে হবে। এই দাবিতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে তালা দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। তিন দিন ধরে বন্ধ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। রান্না হচ্ছে না। শিশু ও প্রসূতিরা খাবার পাচ্ছে না। তা নিয়ে অবশ্য বিশেষ হেলদোল নেই ওই তৃণমূল নেতার। বরং গোটা ঘটনার জন্য তিনি দায়ী করলেন সিডিপিও(চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট অফিসার)-কে। ঘটনাটি নদিয়ার ধুবুলিয়ার। প্রশাসনকে জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি দাবি ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিক্ষিকার।
নদিয়ার ধুবুলিয়া বটতলার ১ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র প্রায় ২২ বছর ধরে চলছে। গত ১ জুলাই এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিক্ষিকা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন টুকটুকি খাতুন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরদিনই ধুবুলিয়া এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূল নেতা বরকত আলি শেখ ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে তালা দিয়ে দেন বলে অভিযোগ। রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের বিধানসভা এলাকাতেই এই ঘটনা। বরকত আলি শেখের দাবি, মন্ত্রী ঘটনার কথা জানেন।
এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিক্ষিকা টুকটুকি খাতুন বলেন, “১ জুলাই এখানে কাজে যোগ দিয়েছি। উনি ২ তারিখ চাবি দিয়ে দেন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের দাবি, ওঁর পছন্দের লোককেই নিয়োগ করতে হবে। তাই, তিনি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে চলে গিয়েছেন। আমায় বললেন, আসতে নিষেধ করার পরও কেন আমি এসেছি।” বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। টুকটুকি খাতুন বলেন, “অফিসে জানিয়েছে। আমি চাই, বাচ্চারা যেন খাবার পায়।”

শিক্ষিকা টুকটুকি খাতুন
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা তাহাজান বিশ্বাস বলেন, “তিনদিন ধরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি বন্ধ। গর্ভবতী মহিলা-সহ ১২০ জনকে খাবার দেওয়া হয়। কেউ খাবার পাচ্ছেন না।” নাসিনা বিবি নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “আমরা চাই, শিশুরা পড়াশোনা করুক। খাবার পাক।”
শাসকদলের নেতার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি। ধুবুলিয়া ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা মণি ঘোষ বলেন, “গায়ের জোরে তালা দিয়ে চলে গিয়েছেন। যা খুশি করছেন, এটা ঠিক নয়। শিশুদের অপরাধ কোথায়? কেন তারা খাবার পাবে না? মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস কোনও প্রতিবাদ করেন না। তিনি একবারও এই নিয়ে বলেননি।”
কী বলছেন ওই তৃণমূল নেতা?
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে অবশ্য কোনও হেলদোল দেখা গেল না ধুবুলিয়া ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য বরকত আলি শেখের। গত ২৫ বছর ধরে এই তিনি গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে তালা মারা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হিসেবে আমি ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের চেয়ারম্যান। তাছাড়া আমি তালা মারিনি। গ্রামের লোক সেখানে তালা দিয়েছেন।”
কিন্তু, তালা দেওয়া হল কেন? তৃণমূল এই নেতার বক্তব্য, “এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের আগের শিক্ষিকা অবসর নিয়েছেন ৩০ জুন। ওই পদের জন্য গত মে ১৩ তারিখে একজন আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁকেই নেওয়ার বিষয়ে ঠিক ছিল। কিন্তু, আচমকা সিডিপিও এই শিক্ষিকাকে নিয়োগ করেছেন। তাই পাড়ার লোক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে তালা দিয়েছেন।”
তালা দেওয়ায় শিশুরা খাবার পাচ্ছেন না? এই প্রশ্নে বিশেষ হেলদোল দেখা গেল না তৃণমূল নেতার। তাঁর বক্তব্য, “এর দায়ভার সিডিপিও-র।” স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস সব জানেন জানিয়ে তৃণমূল এই নেতার দাবি, “বিধায়ক উজ্জ্বলবাবু সব জানেন। সিডিপিও তাঁরও ফোন ধরছেন না।” সমস্যার সমাধান কখন হবে? বরকত আলি শেখের আশ্বাস, “আশা করি আজ বিকেলেই ফয়সালা হয়ে যাবে। তারপর পাড়ার লোক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের তালা খুলে দেবে।”

