নদিয়া: বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই ঘাসফুলে যোগদানের হিড়িক পড়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের ‘আদি নেতা’ মুকুল রায়ের (Mukul Roy) ঘরওয়াপসির পর থেকে ক্রমেই পাল্লা ভারি হচ্ছে ঘাসফুলের। যদিও, গেরুয়া শিবির সেই ভাঙন মানতে নারাজ। মুকুলের ঘরওয়াপসি নিয়ে বিশেষ মুখ খুলতে চায়নি বঙ্গ বিজেপি।
সম্প্রতি, বিধানসভায় পিএসসি পদে তৃণমূলের তরফে মনোনীত হয়েছেন মুকুল রায়। বিজেপির তরফে মুকুলের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে মামলাও করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। এককালীন সতীর্থই আজ প্রতিপক্ষ। মামলা করেই ক্ষান্ত হননি অধিকারী পুত্র। এককালীন ‘গুরুর’ বিরুদ্ধে একাধিকবার সুর চড়াতে শোনা গিয়েছে অধিকারীপুত্রকে। এ বার, সরাসরি শুভেন্দুকে (Suvendu Adhikari) তোপ দাগলেন মুকুল। পাশাপাশি, নিজের কেন্দ্র কৃষ্ণনগরে যোগদান পর্বও সারেন ‘চাণক্য’।
বিধানসভা নির্বাচনের পর এই প্রথমবার নিজের কেন্দ্র কৃষ্ণনগরে পা রাখেন মুকুল। তারপরেই, বিজেপিতে চলে যাওয়া প্রায় ২১৫ জন কর্মীকে এদিন তৃণমূলে ফেরান তিনি। বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট ও বিজেপি নেতা অরুপ রায় এদিন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। এছাড়াও বেশ কয়েকজন প্রাক্তন কাউন্সিলর সহ শতাধিক বিজেপি কর্মী মুকুল রায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগদান করেন। যদিও, মুকুল জানান, এদিন মূলত কৃষ্ণনগরের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্য়েই তাঁর এই কর্মসূচি।
রবিবার, যোগদান পর্বের পর সাংবাদিক বৈঠকে সরাসরি অধিকারী পুত্রকে নিশানা করে মুকুল বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে আমায় দলে নিয়েছেন। দলে ফিরতে পেরে আমি খুশি। আমি শুনেছি আমাদের বিরোধী দলনেতা অনেক কিছুই করছেন। ওঁকে বলি, আগে ওঁ নিজের বাবাকে দলে যোগদান করিয়ে দেখান। লেট স্টার্ট দিস ফ্রম হিজ় ফাদার। সেটা করিয়ে দেখান। তাহলেই বুঝব।”
উল্লেখ্য, বিধানসভা নির্বাচন আবহেই তৃণমূল (TMC) ছেড়ে বিজেপিতে (BJP) যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী। তাৎপর্যপূর্ণভাবে গোটা নির্বাচনে যেভাবে বিজেপির তরফে ‘ফ্রন্টলাইনে’ এসেছেন শুভেন্দু, ঠিক ততটাই দূরে ছিলেন মুকুল। বঙ্গ বিজেপির পরাজয়ের পেছনে কার্যত মুকুলকে ‘অন্ধকারে’ রাখাকেই দায়ী করেছিলেন শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ।
যদিও, রাজনৈতিক মহলের একাংশের অনুমান, শুভেন্দুর এই উত্থান ও নির্বাচন আবহে অপরিমিত যোগদান সেইভাবে মানতে পারেননি মুকুল। ধীরে ধীরে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল দলের সঙ্গে। গত, ১১ জুন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে স্বপুত্র যোগ দেন মুকুল রায়। তাঁর দলত্যাগের পরেই মুকুল রায়ের উদ্দেশে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকরের দাবি জানিয়ে, সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছিলেন, “কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক আশা করব পদত্যাগ করবেন। নইলে রাজ্যপালের কাছে আবেদন করব। বিধানসভার অধ্যক্ষ ব্যবস্থা না নিলে আইনের দ্বারস্থ হব।”
রবিবার, পুত্র শুভ্রাংশুকে নিয়ে কৃষ্ণনগরের বেলেডাঙা মোড়ের বাসভবনে আসেন মুকুল। সেখানে তিনি দলীয় কর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন৷ এরপর তিনি কৃষ্ণনগর ৩৪ নং জাতীয় সড়কের পাশে একটি রেস্তোরায় দলীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আরও পড়ুন: ‘সিট গঠন করাটা আইওয়াশ, কেন কেঁচো খুড়তে সাপ বের করছেন!’, ফিরহাদকে তীব্র আক্রমণ শুভেন্দুর